করোনা মহামারী নয়, ক্ষুধা ভাইরাসই তৃণমূলের মরণ ফাঁদ || গোলজার আহমদ হেলাল

গোলজার আহমদ হেলাল :
করোনা মহামারী নয়, ক্ষুধা ভাইরাসই তৃণমূলের মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একদিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লাফিয়ে লাফিয়ে যেমন বেড়েই চলছে,তেমনি লকডাউন কঠোর লকডাউনে কর্মহীন মানুষের জীবনযাত্রা অন্ধকারে নিপতিত হচ্ছে। অনাহারে, অর্ধাহারে অচল হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র।একই পরিবারের একাধিক লোকজন একসাথে মৃত্যুমুখে পতিত হলে যে দুঃখ কষ্ট অনুভব হয়,অনাহারে অভাবের তাড়নায় সেই পরিবার সমান তালে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়।

লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূলের জনগণের মাথায় হাত, আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়েছে। গরীব-দুঃখী দরিদ্র জনসাধারণসহ দিন মজুর, শ্রমজীবি, মুদি দোকানী সবার একটাই বক্তব্য করোনা নয় ক্ষুধা ভাইরাসের চাপ। সরেজমিন সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

আমরা জানি, সমাজ উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা ক্যাপিটালিজমের দৌরাত্ম্য। লকডাউনে পুঁজিবাদ ও পূঁজিপতিদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলে। আর অসহায় জনগণ ধুঁকে ধুঁকে মরতেই থাকে। গাড়ী গাড়ী করে পূঁজিপতিরা নিত্যদিনের পণ্য তাদের দখলে নিয়ে নেয়। বাজার হয়ে যায় অস্থিতিশীল। সাধারণ জনগণ নিত্যদিনের বাজার করতে হিমশিম খায়। রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা কে বিকলাঙ্গের দিকে নিয়ে যায় পুঁজিবাদ নামক গরীব কে গরীব করার আরেক মরণ ফাঁদ।

পৃথিবীটা শাসন করে বি গ্রেডের মানুষ।আর পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখে সি এবং ডি গ্রেডের মানুষ।এ গ্রেডের মানুষগুলো বাস্তবে পৃথিবীর কোন কাজেই লাগে না। তারা শুধুই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একটা নির্ঝঞ্ঝাট আরাম আয়েশের জীবন কাটিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় আর দশটা জড় বস্তুর মতো।আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বক্তব্যটা সত্যিই প্রণিধানযোগ্য, চোখের সামনে জীবনের অনেকগুলো পরিচিত মুখ কি ভেসে উঠছে? উঠতে বাধ্য।
করোনার এই দুঃসময়ে অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনের বক্তব্যটাও দেখে নিতে পারি আমরা।”অর্থনীতি টিকিয়ে রাখে গরীব মানুষেরা, ধনীরা নয়।” মানে সেই সি আর ডি গ্রেডের মানুষেরাই।

সত্যিই আমরা অনেক কিছুর গান গাই। আমরা জিডিপির গান গাই, প্রবৃদ্ধির গান গাই, উন্নয়নের গান গাই। গান গাই সমুদ্র জয়ের। কিন্তু জীবনের গান গাইতে পারি না।অথচ জীবনের গান গাওয়াটাই রাজনীতির চরম ও পরম স্বার্থকতা।
এ সংকটকালে জীবনের গান গাওয়াটাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। জীবন নদীরে প্রবহমান ও সচল রাখতে সবার সবকিছু কে বিলিয়ে দিতে হবে।

একবার গ্রাম ঘুরে আসুন। কিংবা নগরের প্রান্তসীমায় অলি-গলিতে পদচারণা করুন। করুণ কাহিনীর সুর মুয়াজ্জিনের ধ্বনির মতো বেজে উঠবে আপনার কর্ণকুহরে।কথায় আছে, রাজনীতির খবর মিলে চা-স্টলে, অর্থনীতির সুস্থতা অসুস্থতা জানা যায় বাজারে। আর তেমনি ভাবে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ আর খেটে খাওয়া মানুষের খবর পেতে হলে যেতে হবে দুয়ারে দুয়ারে, পাড়ায় মহল্লায় আর গ্রামে গন্জে।তৃণমূলে না গেলে এ খবর মিলবে না। এসি রুমে বসে অনেক কিছু করতে পারলেও জনমানুষের রাজনীতি করা যায় না।বুভুক্ষু মানুষের পেটে ক্ষিধা রেখে যেমন সার্জারী করা যায় না।তেমনি গরীবের রুটি রুজির ব্যবস্থা না করে জনসচেতনতা,পাবলিক হেলথ ক্রাইসিসের মতো বৈশ্চিক সংকট মোকাবেলা শুধু দুরুহ নয় দুঃসাধ্য বলে অনেকের অভিমত।তৃণমুলের একটাই প্রত্যাশা ও দাবী ,’আমাদের খাবার দিন।’অন্ন মানুষের মৌলিক চাহিদার সর্বাগ্রে।তবে জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে অন্ন আহরণ বিষধর সর্পের মস্তক থেকে মণি গ্রহণের সমতুল্য নয় কি?

লেখক: সহ-সভাপতি, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব।