কালজয়ী ৪ গানে অমর হয়ে থাকবেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর
চেম্বার ডেস্ক:: করোনাভাইরাসের কাছে হার মেনে অবশেষে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন কিংবদন্তি গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর।
শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই শিল্পী।
তার মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একুশে পদক পাওয়া এ গণসংগীতশিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা বার্তায় শোক জানাচ্ছেন সংগীতপ্রেমীরা।
তার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হচ্ছে সেসব পোস্টে।
অনেকেই আবেগে লিখেছেন, সখিনার প্রেমে অমর হয়ে থাকবেন ফকির আলমগীর। সংগীত ভূবনেই এই ‘রিকশাচালক’কে আর দেখা যাবে না।
ফকির আলমগীরের কালজয়ী গান ও সখীনা গেছস কি না ভুইলা আমারে শোনেনি বা জানে না এমন কেউ নেই।
গানে গানে আজীবন অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ফকির আলমগীর। তার এই বিশেষত্বই দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে।
তিনি গাইতেন মানুষের জন্য, দেশের জন্য। মানবতার কথা, বঞ্চিত মানুষের অধিকারের কথা নিয়েই গানে গানে হাজির হতেন এ গণসংগীতশিল্পী।
সুরে সুরে ফকির আলমগীর ছিলেন এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।
গ্রামে-গঞ্জে, মাঠে-ঘাটে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় শিল্পীর সেসব গান। এসব গানের মধ্যে অন্যতম – ‘ও সখিনা’, ‘মায়ের এক ধার দুধের দাম’, নাম তার ছিল জন হেনরি’ ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’ বেশ জনপ্রিয়।
‘মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদী ভবে কেউ হবে না আমার মা গো, পিতা আনন্দে মাতিয়া, সাগরে ফেলিয়া, সেই যে চইলা গেল ফিরা আইল না, মায়ের ধরিয়া যঠরে, কত কষ্ট করে, দশ মাস দশ দিন পরে গেল বেদনা, এমন দরদী ভবে কেউ হবেনা আমার মা গো।
গানটি অমর হয়ে থাকবে চিরকাল। বিশেষ করে মা দিবস এই গান ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ।
মে দিবসে ফকির আলমগীরের গাওয়া সেই গানটি বাজান অনেকে –
‘নাম তার ছিল জন হেনরী ছিল যেন জীবন্ত ইঞ্জিন, হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে খুশি মনে কাজ করে রাতদিন, কালো পাথরে খোদাই জন হেনরী, গ্রানাইট পেশি গড়া ঝলমল, হাতুড়ির ঘায়ে ঘায়ে পাথরে আগুন ধরে, হাতুড়ি চালানো তার সম্বল’
‘কালো কালো মানুষের দেশে, ঐ কালো মাটিতে/ রক্তের স্রোতের শামিল/ নেলসন ম্যান্ডেলা তুমি অমর কবিতার অন্ত্যমিল/ তোমার চোখেতে দেখি স্বপ্ন-মিছিল/ অগুন্তি মানুষের হৃদয়ের মিল।’
পৃথিবীর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে ১৯৮৯ সালে এই অসাধারণ গানটি কণ্ঠে তোলেন ফকির আলমগীর। গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
বাংলাদেশ সফরে আসার পর স্বয়ং নেলসন ম্যান্ডেলাও গানটি শুনে মুগ্ধ হন।
বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সংগীশিল্পী ফকির আলমগীর। গণসঙ্গীত ও দেশীয় পপ সঙ্গীতে তার ব্যাপক অবদান তার।
১৯৬৯ সালে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে গণ অভ্যুত্থানে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে।
১৯৭৬ সালে ফকির আলমগীর গড়ে তোলেন লোকপ্রিয় ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী।
সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে একুশে পদক পান ফকির আলমগীর।
ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতার নাম – মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেছা। ফকির আলমগীর কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে ১৯৬৬ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।
জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সঙ্গীত বলয়ে প্রবেশ করেন।
আমৃত্যু বঞ্চিত মানুষের পক্ষে গান গেয়ে গেছেন এই গণসংগীত শিল্পী।