বিধিনিষেধ মানাতে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

চেম্বার ডেস্ক:: করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে আজ বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী ৭ দিন কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

সরকার ঘোষিত সাতদিনের কঠোর এই বিধিনিষেধের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পাল্টে গেছে রাজধানীর চিত্র। সড়কে নেই অন্যান্য দিনের মতো অফিসমুখী মানুষের চাপ, নেই যানবাহনের ছুটে চলা, বন্ধ রয়েছে দোকানপাট।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শংকর, জিগাতলা, সিটি কলেজ মোড়, রাসেল স্কয়ার, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলী ঘুরে এসব এলাকার গলিগুলোতে তেমন কোনো মানুষের চলাচলের দেকা মেলেনি। বন্ধ ছিল দোকান। তবে ৮টার পর থেকে কিছু মানুষের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে।

 

সরেজমিনে রাজধানীর শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি-৩২, পান্থপথ ও কলাবাগান এলাকা ঘুরে দেখা যায় এসব এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। স্থাপন করা হয়েছে একাধিক চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট থানার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জন ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। জরুরি প্রয়োজনে যারা সড়কে বেরিয়েছেন তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের।

 

সড়কে যেসব গাড়ি চলাচল করছে সেগুলোর অধিকাংশই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি ও খাদ্য পণ্যবাহী ট্রাক, সরকারি কর্মকর্তাদের বহনকারী যানবাহন ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত মোটরসাইকেল। তবে এ সময়ে অলিগলি ও সড়কে কিছু রিকশার চলাচল দেখা যায়।

প্রধান সড়কগুলোতে কিছু পণ্যবাহী ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, পোশাক প্রস্তুতকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মী আনা-নেওয়ার গাড়ি, বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের গাড়ি ও সংবাদমাধ্যমের গাড়ি চলতে দেখা গেছে। তবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কঠোর ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে। যার ফলে তারা প্রায় প্রত্যেকটি গাড়ি চেক করার চেষ্টা করছেন। তারাও প্রত্যাশা করেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ঢাকাবাসী তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

 

রাস্তায় কীভাবে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদ আহসান বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রত্যেকটি গাড়ি চেক করছি। এছাড়া জরুরি সেবার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শনাক্তে আইডি কার্ড দেখা হচ্ছে। সকাল থেকে আমার মাঠে নেমেছি।’

 

এদিকে গাবতলীর সড়কে তেমন কোনো যানবাহন দেখা যায়নি। যে দু’একটির দেখা মিলেছে সেগুলো পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্মীদের গাড়ি। এছাড়া কয়েকটি কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ চলাচল করতে দেখা গেছে। সেখানে দায়িত্বে থাকা সার্জেন্টরা বলছেন, এই পথ ধরে পণ্যবাহী গাড়িগুলো ঢাকার বাইরে যাচ্ছে বেশি। এছাড়া সাভার-আশুলিয়াগামী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কিছু গাড়ি ঢাকা থেকে বের হচ্ছে।

 

ট্রাফিকের মিরপুর বিভাগের এডিসি মো. সোহেল রানা বলেন, ‘গাবতলী পয়েন্টে সকাল থেকে তেমন কোনো চাপ নেই। সকালে কাভার্ড ভ্যানের একটু চাপ ছিল, আর কিছু গার্মেন্টসের গাড়ি। এখন তো একেবারেই চাপ নেই। মনে হয় ঢাকাবাসী লকডাউন মানছেন, তাই গাড়ির চাপ কম।’

 

এদিকে, গণপরিবহন না থাকায় ঢাকায় চলাচলের বড় ভরসা রিকশা। বেশি ভাড়া দিয়েই যানবাহনটিতে চড়তে হয়েছে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীদের।

 

রাজধানীর মোহাম্মাদপুর এলাকায় কথা হয় রিকশার এক যাত্রীর সঙ্গে। ভাড়া নিয়ে আলাপ তুললে তিনি বলেন, ‘যাইতে পারতেছি, এটাই বেশি। আমাদের কিছুই করার নাই। বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও যেতে হবে।’

 

এর আগে বুধবার (৩০ জুন) কঠোর বিধি-নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, যানবাহন ও দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।