ঘন ঘন ভূমিকম্প তদন্তে আজ সিলেট আসছে জাতীয় কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটে ঘন ঘন ভূমিকম্প কারণ জানতে আজ সিলেট আসছে ৫ সদস্যের জাতীয় কমিটি। আজ রোববার সকালে তারা সিলেট এসে পৌছবেন। জালালাবাদ গ্যাস অফিস সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
গ্যাস অফিস সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। গঠিত এ কমিটি সিলেটে সরেজমিনে পরিদর্শন করে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে।
সিলেটে গত দু’সপ্তাহে পর পর কয়েক দফা ভূমিকম্পের ঘটনা জনমনে আতংক ছড়িয়ে পরে। কেউ বলছেন প্রাকৃতিক, কেউ বলছেন মানবসৃষ্ট। তবে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বার বার ভূমিকম্পের জন্য মাইনিং প্রকল্পের দিকে তীর ছুঁড়েছেন। আর এটি নিশ্চিত হতে তদন্তে সিলেট আসছেন ৫ সদস্যের জাতীয় কমিটি। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ক্ষেত্র থেকে ভূমিকম্প হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেই আসছে এই কমিটি। পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রোডাক্ট শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) প্রকৌশলী মো. শাহীনুর ইসলাম নেতৃত্বে ৫ সদস্যসের বিশেষজ্ঞ এই কমিটিতে রয়েছেন বাপেক্সের ১ জন জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তা, পেট্রোবাংলার ১ জন জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপক।
গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ভূমিকম্প হয়ে থাকতে পারে কিনা জানতে চাইলে জাতীয় কমিটির সদস্য পেট্রোবাংলার উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। যদি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে এমনটা হয়ে থাকে তবে গ্যাস তোলা বন্ধ করতে হবে। তবে গ্যাস উত্তোলন ক্ষেত্র থেকে এমন ভূমিকম্প হওয়ার নজির নেই। তবে এসব হচ্ছে আমাদের ধারণা। যেহেতু একটা জল্পনা উঠেছে তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
কয়দিনের জন্য এই পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা চলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ৫দিনের ভিতরে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কোনো ব্রিফিং করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এটা রাষ্ট্রিয় পর্যায়ের ব্যাপার। কনফিডেনশিয়াল রাখা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টা আসলে মন্ত্রণালয় বুঝবে। এবিষয়ে এখন ঠিক কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে রাষ্ট্র কিছুতেই মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করবে না।
গ্যাস উত্তোলন ক্ষেত্রে এমন ঘটনার নজির কোথাও নেই বলে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশেই তো গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে না, পৃথিবীর আরও বহু দেশে উত্তোলন হচ্ছে। কোথাও এমন নজির নেই। যদি এমনটা হতো তাহলে এই ব্যবসায়ই বন্ধ হয়ে যেত। আর এখানে ধামাচাপার কিছু নেই, দৃশ্যমান বিশাল প্রজেক্ট। ভূমিকম্পের একটাই কারণ টেকটোনিক প্লেটের ফাটল। আর মাইনিং প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়লা পাথর উত্তোলনে মাইনিংয়ের কারণে মাটি ও পানি সরে গিয়ে ৫/৬ মিটার দেবে যেতে পারে। তবে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয় না। গ্যাস উত্তোলনের সাথে ভূমিকম্পের কোনো রিলেশন নেই। এরকম হলে কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করতো না। তারপরও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা আসবেন, দেখবেন শুনবেন। যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে তারা জানাবেন। সবকিছুর পরে বলবো, অমূলক ভীতি ছড়ানো ঠিক না।
সিলেটে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েক বার বড়ধরণের ভূমিকম্প অনুভূত হয়। গত ২৯ মে সিলেটে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে সর্বোচ্চ ৮ বার ও সাড়ে ৩ ঘন্টার মধ্যে ৬ বার ভূমিকম্প হয়। শনিবার সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে সর্বোচ্চ ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। যার উৎপত্তিস্থল জৈন্তাপুর বলা হয়। তার ঠিক ১০ দিনের মাথায় গত ৭ জুন সন্ধ্যায় মাত্র একমিনিটের ব্যবধানে দুইবার কেঁপে উঠলো সিলেট। সন্ধ্যা ৬টা ২৯ মিনিটের দিকে ৩.৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যার উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ সুরমার জালালপুরে বলা হয়। আবহাওয়া অফিস থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল জৈন্তাপুর ও জালালাপুর বলা হলেও এসব এলাকার মানুষজন ভূমিকম্প টের পাননি। শুধুমাত্র সিলেট নগরে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্প নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। এমনকি এটি প্রাকৃতিক ভূমিকম্প কিনা বিশেষজ্ঞরাও এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
সিলেটে ১০ দিনের মাথায় পুনরায় ভূমিকম্প হওয়ায় নড়েচেড়ে বসে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা। জালালাবাদ গ্যাস অফিসের একটি সূত্র জানায়, ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় বিষয়টি তদন্ত করতে ৫ সদস্যের একটি টিম আসছে সিলেটে।