ঈদের আগেই সিলেটসহ দেশে ২ হাজার ইউপিতে নির্বাচন
চেম্বার ডেস্ক::
আগামী জুলাইয়ে শেষ হচ্ছে দুই হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মেয়াদ। নিয়মানুযায়ী, পূর্ববর্তী নির্বাচনের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। সে হিসেবে আসন্ন কোরবানির ঈদের আগেই সিলেটসহ এসব ইউপিতে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।
তবে মেয়াদ পার হতে যাওয়া সবগুলো ইউপির ভোট একসঙ্গে গ্রহণ করা হবে না। নির্বাচনের তফসিল আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। ঐ ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী জুনে প্রথম ধাপের ভোট এবং বাকিগুলো আরো দুটি ধাপে জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
ইসি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসির কমিশন সভায় এনিয়ে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়তে থাকে। যে কারণে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আগামী ২ জুন ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে ইসি থেকে জানিয়ে দেয়া হতে পারে। তফসিল ঘোষিত ইউপিতে নতুন করে আর তফসিল দেয়া হবে না। এগুলোতে যে অবস্থায় নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছিল সে অবস্থাতেই ফের প্রচারণা শুরু হবে। প্রচারণা শুরুর ১০ দিন পর ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনের হিসাব পরিষদের মেয়াদের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন পূর্ববর্তী নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত। নির্বাচন বিষয়ে আইনের ২৯ (৩) ধারায় বলা আছে- ‘পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হতে ৫ (পাঁচ) বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’
অর্থাৎ বর্তমান পরিষদের নির্বাচন যে তারিখে হয়েছে, তা হতে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নতুন ভোট হতে হবে। এ হিসেবে তফসিল ঘোষিত ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও দেশের অর্ধেকেরও বেশি ইউপির ভোটের সময় ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ প্রথম দফায় ৭২৫টি, ৩১ মার্চ ৬৪৪টি, ২ এপ্রিল ৬১৫টি, ৭ মে ৭০৩টি, ২৮ মে ৭১৮টি এবং ৪ জুন ৬৯৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এ হিসেবে বেশিরভাগ ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় পার হয়ে গেছে। তাই স্থনীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিদ্রুতই ভোট সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মেদ বলেন, অন্যান্য পরিষদের ক্ষেত্রে প্রথম বৈঠকের তারিখ ধরে ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ববর্তী ৯০ দিন বা ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন থেকে ৫ বছর পূর্তির পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হবে। এ হিসেবে ইতোমধ্যে বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে।
তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান নেই। আইনের স্পিরিট হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট করতে হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট না হলে কি হবে সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কোনো বিধান নেই। এক্ষেত্রে বর্তমান পরিষদকেই এটি চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, পরিষদ বিলুপ্ত করা যাবে না। ফলে যতদ্রুত সম্ভব ভোটে যেতে হবে।
মেয়াদ শেষ হওয়ায় গেল রমজানের আগেই ৩৭১টি ইউপিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দিয়েছিল ইসি। কিন্তু মহামারী করোনার মংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এসব ইউপির ভোট স্থগিত রাখতে হয় কমিশনকে। একই সঙ্গে ষষ্ঠ ধাপের পৌরভোট এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনে উপনির্বাচনও স্থগিত করা হয়েছিল। এখন করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় নতুন করে ভোট আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আগস্ট মাসে নির্বাচন কমিশন কোনো ধরনের ভোটের আয়োজন করবে না। যে কারণে জুলাইয়ের মধ্যেই ভোটগুলো সম্পন্ন করার পক্ষে কমিশনের বেশিরভাগ সদস্য। এরই মধ্যে দুই দফা সভা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে রেখেছে ইসি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। আগামী দুই জুন অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
ইসি কমিশনের সর্বশেষ সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, লক্ষীপুর-২ সংসদীয় আসন, ষষ্ঠ ধাপে ১১ পৌরসভা ও প্রথম ধাপে ৩৭১ ইউপিসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে গত ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারিত ছিল। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ১ এপ্রিল এসব নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
এতে বলা হয়, প্রথম ধাপের ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ মে মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর ১১টি পৌরসভার মেয়াদ জুনের প্রথমার্ধে শেষ হবে। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হবে ২৬ জুলাই। মেয়াদ বিবেচনা করে এসব নির্বাচন জুন মাসেই আয়োজনের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে কমিশন সচিবালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।-মানবকন্ঠ