সর্বশেষ

» আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর

প্রকাশিত: ১৩. মে. ২০২১ | বৃহস্পতিবার

চেম্বার ডেস্ক:: ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে বিদায় নিলো হিজরি মাস রমজান। দেশের আকাশে দেখা দিয়েছে শাওয়াল মাসের চাঁদ। তাই আজ শুক্রবার (১৪ মে) উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

 

ঈদ মানেই পরম আনন্দ। ঈদ মানেই নতুন জামাকাপড়। ঈদ মানে আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো, খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা। এ উৎসবে মুসলমানরা ঈদগাহে কোলাকুলি ও করমর্দন করে থাকেন।

এছাড়া সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করাও ঈদের অন্যতম অর্থ। ঈদ মানে ভোগান্তিকে সঙ্গী করে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্রিত হওয়া। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবারের ঈদ আনন্দের সবকিছুতেই যেন ভাটা পড়েছে।

 

করোনার দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ এবারের ঈদেও নেই অনাবিল আনন্দের আবহ আর খুশির জোয়ার। অদৃশ্য এক ভাইরাসে পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। এক কথায় বলতে গেলে, এবারও ঈদ উৎসব আনন্দ-খুশির ডালা সাজিয়ে নয়, এসেছে শঙ্কা-অনিশ্চয়তার বার্তা নিয়ে।

 

ঈদের নামাজ একটি বড় উৎসব। এদিন ছেলে, বুড়ো, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই দল বেঁধে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে যান। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়, করমর্দন, কোলাকুলি করেন। সকল ভেদাভেদ ভুলে হাতে হাতে রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নেন। কিন্তু করোনার স্বাস্থ্যবিধিতে এবারও তা হচ্ছে না। এবারের ঈদে নামাজ শেষে করা যাবে না চিরাচরিত কোলাকুলি, করমর্দন। উন্মুক্ত স্থানে জনসমাগম করা যাবে না। তাই ঈদের নামাজ পড়তে হবে মসজিদে মসজিদে।

 

সময় ভাগ করে একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই নামাজ আদায় করতে হবে। যে এলাকায় করোনার প্রাদুর্ভাব নেই সেই এলাকায় হয়তো স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে ঈদগাহে জামাত হতে পারে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা মেনে করা যাবে না কোলাকুলি, করমর্দন।

 

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রথম রমজান থেকে সরকারি বিধিনিষেধ চলছে। যা ঈদের পরেও বহাল থাকছে বলে আভাস দিয়েছে সরকার। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঈদযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সব ধরনের গণপরিবহন। তাই নাড়ির টানে গ্রামে গিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্র হওয়াতে ছেদ পড়েছে। যদিও সরকারি বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করে নজরবিহীন ভোগান্তিকে সঙ্গী করে গ্রামের বাড়িতে গেছেন অনেক মানুষ। তবে অনেকেই কর্মস্থলে থাকছেন।

 

ঈদ সামনে রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কাটা, দূরপাল্লার বাসে টিকিট কাটার জন্য এবার ছিল না হুড়োহুড়ি। ছিল না যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেনের ছাদভর্তি মানুষ—চিরাচরিত সেই দৃশ্য। লঞ্চের ডেকের ওপর ঠাসা যাত্রীর কোলাহলও দেখা যায়নি। চোখে পড়েনি মহাসড়কে যানজট।

 

ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো মেলার আয়োজন এবার হয়নি। প্রতি বছর শাড়ি মেলা, পাঞ্জাবি মেলাসহ বিভিন্ন মেলা বসে ঈদঘিরে। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে থাকে উপচে পড়া ভিড়। অনেকে আনন্দ করার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। অনেকেই চান ঈদের ছুটিতে সাগর-পাহাড় বা কাছাকাছি কোনো রিসোর্টে নিজেদের মতো সময় কাটাতে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেকেই যান বিনোদন কেন্দ্রে। কিন্তু এবার দেশ-বিদেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোও বন্ধ রয়েছে। সেখানে যাওয়ারও উপায় নেই।

 

মন ভার হওয়ার এমন নানা কারণ থাকলেও সবাই আশাবাদী এই দুর্দিন কেটে যাবে বলে। বৃহস্পতিবার (১৩) মে সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঈদ উদযাপন করবো, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কোনোভাবেই এই ঈদ উদযাপন যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ হয়ে না ওঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।…বেঁচে থাকলে আসছে বছর আবার আমরা আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারবো।

 

ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, পূর্ণমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ মুসলমান জাতির প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিরাট নিয়ামত। এই উৎসবেই ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র সবাই ভালোবাসা-মমতার বাহুডোরে অনাবিল আনন্দ-উৎসবে মিলেমিশে যায়। নজরুলের ভাষায়, ‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,/তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।/ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930