রোববার থেকে ‘শিথিল’ হতে পারে চলমান বিধিনিষেধ
চেম্বার ডেস্ক:: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের সময় বাড়লেও কিছু শর্ত শিথিল করা হতে পারে। সরকার দোকানপাট ও শপিংমলগুলো সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে। এছাড়া গণপরিবহন চলাচল বন্ধের শর্তও শিথিল হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা অর্থসূচককে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, আগামী রোববার অথবা সোমবার থেকে (২৫-২৬ এপ্রিল) দোকানপাট ও বিপণি বিতান সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হতে পারে। এছাড়া অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে পারে গণপরিবহনগুলোও। যদিও দ্বিতীয় মেয়াদের সর্বাত্মক লকডাউন শেষ হবে ২৮ এপ্রিল। তবে তার আগেই কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করার বিষয়ে ভাবছে সরকার।
আজ বুধবার (২১ এপ্রিল) সরকারের প্রথম দফার ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ শেষদিন। গত ১৪ এপ্রিল থেকে চলমান এ লকডাউন শেষের দিকে এসে অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে। সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর, গুলিস্তান, কমলাপুর, শাহাবাগ, ধানমন্ডি, আজীমপুর, লালবাগ, পল্টন, উত্তরাসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা যায় চলাচল করছে গণপরিবহন বাদে অন্যান্য প্রায় সব যানবাহন। খোলা রয়েছে দোকানপাট, বাজারগুলোতে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
তবে, পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘মুভমেন্ট পাস’ আর জরুরি সেবার সাথে জড়িত ছাড়া কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
গত দ্ইুদিন ধরে পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে শুরুর দিককার মতো এখন আর ততোটা কড়াকড়ি লক্ষ্য করা যায়নি। সবার পরিচয়ও জানতে চাওয়া হচ্ছে না প্রশাসনের পক্ষ থেকে। অবাধে চলাচল করছে মানুষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, আসলে ‘ঢিলেঢালা লকডাউন’ বলাটা ঠিক হবে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ১৮ শ্রেণির লোকের‘মুভমেন্ট পাস’ নেওয়ার দরকার হচ্ছে না। এছাড়া যারা হাসপাতালে যাচ্ছেন বা অন্য কোনো জরুরি কাজে আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে দেশের সব দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী আগামী সোমবার থেকে দেশের দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়েছে।
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি তিনি যেন আগামী সোমবার সারাদেশের দোকান ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। আমাদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি ফেলবেন না। এর আগেও আমাদের কোনও দাবি তিনি ফেলেননি।’
গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিধিনিষেধ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভায় বসেন বেশ কয়েকজন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সভায় শর্ত শিথিলের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তিনি নাম প্রকাশ না করা শর্তে অর্থসূচককে বলেন, বিধিনিষেধের মধ্যেও মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ রাখার জন্য কয়েকজন সচিব মত দিয়েছেন। এর ফলে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়া এবং সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়া হতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তিনি অনুমতি দিলেই বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।’
এর আগে গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ঈদের আগে লকডাউন শিথিলের চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। ঈদের সময় মানুষের যাতায়াতের জন্য লকডাউন শিথিল হতে পারে।
এদিকে নিম্ন আয়ের মানুষ অনেকেই পথে নেমেছেন জীবিকার তাগিদে। তারা বলছেন, আর কোনো উপায় না থাকায় তারা পথে নেমেছেন। ঘরে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় প্রথম দফায় গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়, যে বিধি-নিষেধের ধারাবাহিকতা চলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। এটি শেষ হবে আজ ২১ এপ্রিল। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো ৭ দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।