শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সিলেট থেকে খোলা চিঠি
চেম্বার ডেস্ক::
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার চলমান অচলাবস্থা নিরসন ও সুরক্ষা নিশ্চিত পূর্বক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন
সিলেট প্রাইভেট স্কুল ও প্রাইভেট কলেজ এসোসিয়েশন।
আজ বৃহস্পতিবার ( ২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর রায়নগরস্থ সার্ক ইন্টারন্যাশনাল কলেজ বাংলাদেশে এক সভায় এ চিটি প্রকাশ করা হয়।
সভায় খোলা চিঠি পেশ করেন প্রাইভেট কলেজ এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক এ কে এম ফজলুর রহমান ও সিলেট প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহি উদ্দিন।
লিখিত এ খোলা চিঠির শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নেতৃবৃন্দ বলেন, এদেশের মানুষ যখন অত্যন্ত আনন্দ এবং ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণভাবে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি শেষ করেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সমস্ত পৃথিবীর বুকে নেমে আসে করোনা নামের এক ভয়ংকর দূর্যোগ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত মহামারী করোনা আঘাত হানে আমাদের দেশেও। কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনের অশেষ রাহমাত এবং আপনার মেধা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতার ফলশ্রুতিতে সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে এ ঘাতক ব্যাধি আমাদের দেশে চরম আকার ধারণ করতে পারেনি হেতু আমরা এখন পর্যন্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো আছি।
নেতৃবৃন্দ চিঠিতে উল্লেখ করেন, আমরা সবাই অবগত আছি যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হলেও অসংখ্য মানুষ ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ করোনার কারণে নানামুখী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। শুরুতে লকডাউনের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, গার্মেন্টস, কলকারখানা, শপিংমল, গণ পরিবহন, বিনোদন পার্ক, অফিস আদালতসহ সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও পরবর্তীতে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া পর্যায়ক্রমে সবকিছু খুলে দেয়া হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আজ অবধি কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে মানবতাবাদী নেত্রী উল্লেখ করে তারা বলেন, আপনি নিশ্চয় জানেন যে, করোনা পরিস্থিতির কারণে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এদেশের কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় পঞ্চাশ হাজার প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১৫ লক্ষ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী দূর্বীসহ ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেননা কোভিড-এর এই কঠিন সময়েও এসকল প্রতিষ্ঠানে সরকার থেকে কোন আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় নি। শিক্ষকসমাজের এই অবস্থা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক।
প্রধানমন্ত্রীকে শিক্ষা-বান্ধব জননেত্রী উল্লেখ করে বলা হয় ,আমরা অত্যন্ত দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, এরূপ কঠিন অবস্থায় বিশেষ করে প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বহুমূখী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন শিক্ষাদান প্রক্রিয়া মারাত্বকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে, অন্যদিকে সীমাহীন আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক ক্ষতির কারণে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী সরাসরি পাঠদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিপরীতে তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইস, অনলাইন গেইমসহ বিভিন্ন ধরণের অপ্রত্যাশিত ক্ষতিকর বিষয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে-এমনকি একটা বড় অংশ নানাবিধ অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের অভিভাবক। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। আমরা লক্ষ্য করেছি, আপনার নির্দেশে আজ প্রায় ৮ মাস অবধি দেশের সকল হাফিজী মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা ও ইয়াতিমখানাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে এবং নিয়মিত সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অথচ করোনায় মারা যাওয়াতো দূরের কথা সেখানে কোন শিক্ষার্থী আজ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বিষয়টি এখন একেবারে পরিষ্কার যে, আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলেমেয়েরা করোনায় আক্রান্তের বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ। অথচ যারা করোনা ঝুঁকির মধ্যে আছে তাদের চলাচল নির্বিঘœ হলেও করোনার নামে অজ্ঞাত কারণে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে চরম হুমকির মূখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
মাননীয় জননেত্রী, আমরা সকলেই জানি, মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষা। আর এই শিক্ষার একমাত্র কারিগর হলেন শিক্ষকরা। তাই শিক্ষকদেরকে বাঁচিয়ে না রাখলে শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। দেশ এগোবে অন্ধকার বলয়ের দিকে। সুতরাং এসব বিবেচনায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া এখন সময়ের দাবী। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে ইনশাআল্লাহ্ সবাই সুস্থতার সাথে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।
সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এদেশের শিক্ষা, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক তথা জাতীয় স্বার্থে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্যে আপনার নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি এবং আমাদের এই দুঃসময়ে আপনার সঠিক নির্দেশনা একান্তভাবে কামনা করছি।