সঠিক পথেই রয়েছে দেশের অর্থনীতি : অর্থমন্ত্রী

চেম্বার ডেস্ক:: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের ধারাবাহিকতায় দেশের অব্যাহত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ ভিত আরও মজবুত করেছে, অন্যদিকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

 

তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের অগ্রগতি থেকে নির্দ্বিধায় বলা যায় আমরা সঠিক পথে রয়েছি।’

আজ বুধবার (২০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে চলমান শীতকালীন অধিবেশনে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন কালে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।

 

প্রতিবেদনে তিনি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয় ব্যায়ের গতিধারা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, রাজস্ব পরিস্থিতি, বাজেট ভারসাম্য ও অর্থায়ন, মুদ্রা ও ঋণ পরিস্থিতি, বৈদেশিক খাত, মূল্যস্ফীতির অবস্থা তুলে ধরেন।

 

প্রতিবেদন উপস্থাপনের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

 

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘করোনা মহামারি সত্ত্বেও বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমরা ৫.২৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। বাস্তবমূখী ও পর্যাপ্ত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার বর্তমান অর্থবছরে ব্যবসা- বাণিজ্যে গতিসঞ্চার, কর্মসৃজন ও কর্মসুরক্ষা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে পেরেছে।’ কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও বর্তমান অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভবপর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।

 

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম প্রান্তিকে সামগ্রিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য চলকগুলোর ইতিবাচক অবস্থা, বিশেষ করে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি, প্রবাস আয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা এবং মূল্যস্ফীতির নিম্নগতি নির্দেশ করে যে, আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর দিকে এগিয়ে চলেছি। কাঙ্কিত গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আগামী দিনগুলোতে আমাদের অন্যতম কৌশল হবে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ খাতে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগে গতি আনা, দারিদ্র্য হ্রাস, রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসার, কর ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক খাতের সংস্কার।’

 

তিনি বলেন, ‘উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন শেষে সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। আমরা ২য় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১)-এর বাস্তবায়নও শুরু করেছি। আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়া।’

 

কোভিড-১৯ মহামারিজনিত বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা কিছুটা শ্লথ হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন,  ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি দিক নির্দেশনায় সরকার সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্বলিত ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার (জিডিপি’র ৪.৩৪ শতাংশ) ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার বাস্তবায়ন কাজ বর্তমানে পুরোদমে চলছে।’

 

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক তুলে ধরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকাশিত ‘হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স ২০২০’ অনুযায়ী ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিগত বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়ে হয়েছে ১৩৩তম। যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ইকোনমিকস এন্ড বিজনেস রিসার্চ এর প্রক্ষেপন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বেও ২৮তম শীর্ষ অর্থনীতি এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম শীর্ষ অর্থনীতিতে উন্নীত হবে। বর্তমানে আমাদের অবস্থান ৪১তম।

 

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির সামষ্টিক অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য চলকগুলো অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত খতিয়ান সংসদে তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে করোনার প্রভাবে মোট সরকারি ব্যয় ৭.৫৭ শতাংশ  কমেছে; তবে সামনের দিনগুলোতে সরকারি ব্যয় বাড়াতে জোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এর তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ৮.২ শতাংশে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮.৩ শতাংশ। এনবিআর এর তথ্যমতে প্রথম প্রান্তিকে এনবিআর কর রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.১১ শতাংশ।

 

তিনি বলেন, প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮.৫৪ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬.৮১ শতাংশ। সরকার কর্তৃক ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া ও রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজীকরণের কারণে প্রবাস আয় বিপুলভাবে বেড়েছে এবং আগামীতে এখাতে প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।

আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে অবহিত করেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর দাঁড়ায় ৩৯.৩১ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৫৪ শতাংশ।

 

রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ২ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১১.৯ শতাংশ)। প্রথম প্রান্তিকে আহরিত রাজস্বের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ১৭.৩ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৩ শতাংশ বেশি।