সিটিজেন জার্নালিজম ও কিছু কথা || গোলজার আহমদ হেলাল
গোলজার অাহমদ হেলাল :: ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোন একটি প্লাটফর্মে কিছু বললে বা লিখলে অথবা আধুনিক মোবাইল ফোন বা যে কোন ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করে তা দিয়ে ছবি উঠালেই সাংবাদিক হওয়া যায় না।
সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মী হতে হলে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলনসহ যে কোন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিস কাল অতিক্রান্ত করতে হয়।
প্রতিটি পেশাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক। এবং প্রতিটি পেশার নিজস্ব কিছু নিয়ম -কানুন, বিধি-বিধান, পেশাগত আচরণবিধি, আলাদা বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা আছে। সাংবাদিকতাও এর বাইরে কিছু নয়।
বর্তমান যুগ অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ।ইন্টারনেটের বদৌলতে অনলাইন, ডিজিটালাইজেশন, আইসিটি এ সময়ের চরম বাস্তবতা। আপনি সোস্যাল মিডিয়ায়,ব্লগ সাইটে লিখুন, কথা বলুন, ডিভাইস ব্যবহার করে ছবি তুলুন, ভিডিও আপলোড করুন।সমস্যা নেই। এটা আপনার বাক স্বাধীনতা। ফান্ডামেন্টাল রাইটস। কিন্তু সাংবাদিক না হয়ে নিজেকে সাংবাদিক দাবী করছেন কেন? বরঞ্চ আপনি নিজেকে লেখক, ব্লগার, অনলাইন সোস্যাল এক্টিভিস্ট বা আলোকচিত্রী পরিচয়ে অভিষিক্ত করুন। অনেক অনেক সম্মান বয়ে আনবে।
দুনিয়ার সব মানুষই খবর ও খবর আদান-প্রদানের সাথে জড়িত। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পর্যায় পর্যন্ত মানুষই সংবাদের সোর্স হিসেবে কাজ করছে। আপনি যে বা যারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করছেন ঠিক তদ্রূপ আপনিও সাংবাদিক কিংবা গণমাধ্যমের সোর্স।
আমাদের এ কথা ভালভাবে বুঝতে হবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পাদিত কোন প্লাটফর্ম নয়। এখানে কোন সম্পাদক নেই। তথ্য বা সংবাদের ফাইল/কপি এডিটিং হয় না। সত্যতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা, সংবাদ মূল্য ও বস্তুনিষ্ঠতা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। এ কাজগুলো গণমাধ্যম করে থাকে। সাংবাদিকরা করে থাকেন। আপনি তো এ কাজ করছেন না। তবে আপনি সোর্স বা সুত্র হিসাবে কাজ করছেন। সন্দেহ নাই।
পৃথিবীতে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চলছে। বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ও অব্যাহত অগ্রযাত্রার ফলে সভ্যতা অনেক দুর এগিয়ে গেছে। বলা হচ্ছে এখন সিটিজেন জার্নালিজম এর যুগ। অনলাইন গণমাধ্যমের জয় জয়কার চলছে। বিশ্বের সর্বাধুনিক, শক্তিশালী ও জনপ্রিয় গণমাধ্যম অনলাইন মিডিয়া। ইট উইল বি কিং। আর সাংবাদিকতা হল সবচেয়ে ক্ষমতাবান,মর্যাদাপূর্ণ ও মহৎ একটি পেশা।
প্রসংগ ক্রমে কথা বলতেই হয় আপনি যদি শুধুমাত্র ফেসবুকে কিছু লিখেই নিজেকে সিটিজেন জার্নালিস্ট ভেবে থাকেন। তাহলে ভুলের মধ্যেই আছেন। সিটিজেন কিংবা পার্সোনাল জার্নালিজমেরও প্রথাগত কিছু নিয়ম আছে। দেখুন ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্টরা কিভাবে কাজ করে। তারা গণমাধ্যমের সাথে সম্পর্ক রেখেই সাংবাদিকতার চিরাচরিত নিয়ম অনুসরণ করেই কাজ করছেন। টাইপিং মিস্টেক, ফ্রন্ট সমস্যা, উচ্চারণ সম্পর্কিত নানা জটিলতা থাকলেও সাধারণ শব্দাবলীর প্রতিনিয়ত বানান ভুল মেনে নেয়া কষ্টকর। ১৫ লাইনের প্রেসরিলিজে ৩০ টি বানান ভুল, এটা কোন ধরনের সাংবাদিকতা? সাংবাদিক হতে হলে ভালো পড়াশোনাও করা লাগে।
এ কথা মনে রাখতে হবে যুগে যুগে প্লাটফর্ম পরিবর্তন হচ্ছে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক (সাউন্ড ও মোশন) আর এখন অনলাইন মিডিয়া। এভাবে সময়ে সময়ে রূপের পরিবর্তন হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বাহনের চিত্র পাল্টাচ্ছে। কিন্তু সাংবাদিকতার মৌলিকত্ব বা বিশেষত্ব হারিয়ে যায় নি। যে মিডিয়া বা যে ধরনের গণমাধ্যমে কাজ করেন না কেন, সাংবাদিকতার বুনিয়াদি মৌলনীতি সকল জায়গায় সকল সময়ে এক ও অভিন্ন।সাংবাদিকতার পাঠ ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্মে উপস্থাপনা, কলা কৌশল ও রচনারীতিতে কিছুটা বৈসাদৃশ্য থাকলেও মূল বিষয় তথা সাংবাদিকতার মৌলিক ধারণার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই।
লেখক:সহ-সভাপতি, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব।