দেশে ১০ মাসে ১০৮৬ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার
ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশে ধর্ষণ যেন মহামারী আকার ধারণ করেছে। এমন বাস্তবতায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১০৮৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৭৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫০ জনকে এবং আত্মহত্যা করেছেন ধর্ষণের শিকার ২৯ জন।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত ‘নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় তৃণমূল সংগঠনের সাড়া ও উদ্যোগ’ বিষয়ক ওয়েবিনারে এ তথ্য উঠে আসে।
ওয়েবিনারের সুপারিশমালায় বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে ভার্চুয়াল কোর্ট অর্ডিন্যান্স যেন কোনও বাধা ছাড়াই কাজ করতে পারে এজন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ধর্ষণ, বাল্যবিয়ে, পারিবারিক নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে বন্ধে বড় প্রচারণা চালাতে হবে।
করোনাকালে পারিবারিক নির্যাতন :
করোনাকালে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩৭,৯১২ জন নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ১৬,৪৮৫ জন প্রথমবারের মতো এই সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর আগে তারা কখনও পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হননি। এফজেএফের কর্ম এলাকায় করা টেলিফোন জরিপ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে ১৭,৫৫৭ জনকে, অর্থনৈতিক নির্যাতন চলেছে ১১,৮৪১ জনের ওপর, শারীরিক নিপীড়নের শিকার ৭,৫৬২ জন এবং যৌন হয়রানির শিকার ৯৫২ জন নারী। তবে শিশুরা অধিকাংশই তাদের বাবা, মা ও পরিবারের অন্যদের দ্বারাই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। একই সময়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ৯৩৫টি শিশু। এমজেএফ’র সহযোগী সংগঠনগুলো ৭১৩টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পেরেছে।
ওয়েবিনারটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন নাসিমা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেভলপমেন্ট ডিরেক্টর, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) বাংলাদেশ-এর জুডিথ হারবার্টসন, মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন এবং অ্যাসিসট্যান্ট ইনসপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ সাহেলি ফেরদৌস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন নাসিমা বেগম এনডিসি বিভিন্ন নারী নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বলেন, সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি নারীদের শক্ত হয়ে দাঁড়ানোর ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। এজন্য সমাজের বিভিন্ন সেক্টরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী শাহীন আনাম তার বক্তব্যে বলেন, যখন দেশব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে, তখন সেখানে সামাজিক আন্দোলনও বাড়ছে। সেই সঙ্গে আছে নাগরিক সমাজ, সরকার ও তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রম। যেসব সংস্থা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধকল্পে কাজ করছে, যেমন- স্বাস্থ্যসেবা, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে।