যুক্তি,তর্কের উর্ধ্বে মানবতা : অাহমদ সালেহ বিন মালিক

অাহমদ সালেহ বিন মালিক:: শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে চলছে আলোচনা, সমালোচনা।কেউ কেউ এ গন্ডি পেরিয়ে জড়িয়েছেন তর্ক,বিতর্কে।ছুড়ে দিচ্ছেন তির্যক মন্তব্য!

আসুন সহনশীল মনোভাব নিয়ে আলোচনা করি…

 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ৮ মাস পুর্ণ হতে চলেছে… ক্যাম্পাস গুলো বন্ধ হয়ে আছে! স্কুল কলেজের প্রাণোচ্ছল আঙিনা নীরব, নিস্তব্ধ হয়ে আছে।ফুল পাখিদের কলকাকলীতে আর জমে না সে উঠোন।ধুমধাম চার ছক্কা,গোল্লাছোট কিংবা হৈ হুল্লোড়,চিৎকার, চেচামেচি নেই,নেই সেই মায়াভরা শাসন কিংবা নিয়ম মেনে,রুটিন মাফিক বেল বাজিয়ে স্যার বদলের, বই বদলের হুড়োহুড়ি!!

অজানা এক আতংক, ভয়,ভীতি আর অনিশ্চিত গন্তব্যে মানবতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারখানা ও কারিগর!

 

শিক্ষকতা কে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান প্রফেশন বলা হয়।সত্যিকার অর্থে সেটা অনস্বীকার্যও বটে।কিন্তু কভিড ১৯, করোনা মহামারির ছোবলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মুকুট, মানুষ গড়ার কারিগর বেসরকারি শিক্ষক সমাজ।দেশ জাতি গঠনের এ মহান কারিগর

দের দুঃসহ জীবন উপলব্ধি করতে পারিনা আমরা।তাদের অনুপম ব্যক্তিত্ব,জীবন আচরণ,স্বীয় মর্যাদার জন্য খালি চোখে এটা উপলব্ধি সম্ভব নয়।গত সপ্তাহেও আমি নিজ চোখে ২ টি পেয়াজ কিনতে দেখেছি একজন সম্মানিতা মহিলাকে!

হয়তো এক কেজি পেয়াজ কিনে দিতে পারতাম, কিন্তু উনার আত্ন সম্মান ও উনার ড্রেস আপ,কথা বলার ধরণ সব মিলিয়ে আমি সাহস করতে পারিনি।

 

ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক বেতন যে সকল প্রতিষ্ঠানের একমাত্র আয়ের উৎস, সে সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়,বেতন, ভাতার কোন অংশই পাচ্ছেন না।এমনিতেই যৎসামান্য সম্মানীতে চাকরি করছেন বেসরকারি শিক্ষকরা,তার উপর এ সামান্যও যখন শূণ্য, অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়!

ভেবে দেখেছেন!!

 

জানেন,পেটের ক্ষিধা,বাসা ভাড়া,বিদ্যুৎ বিল, চিকিৎসা কিংবা সন্তানের দায়িত্ব,বৃদ্ধ বাবা মায়ের দায়িত্ব লক ডাউন বুঝে-না,কোয়ারেন্টাইন,আইসোলেশন ও মানেনা! বুঝতেও চায় না,অভাব কিংবা অজুহাত। বেঁচে থাকতে হলে,শ্বাস নিতে হলে শ্বাসনালীর খোরাক দিতে হয়,দিতেই হবে আপনাকে জল,পানি -আহার!

শূণ্য পকেটেও ক্ষিধে পায় প্রিয় ভাই, বরং বেশিই পায়।সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে, গরিবে খায় বেশি।আসলেও কি তাই,না অভাবি মানুষের ক্ষিধে পায় বেশি! এটাই সত্য।কারণ খাবার নিশ্চয়তা না থাকলে তীব্রতা বেশিই হয়,এটাই স্বাভাবিক।

 

কিন্তু, করণীয় কি?

করোনা কি শুধু স্যারদের জন্য?না অবশ্যই না…এটা সবার, মাত্রাগত তারতম্য হতে পারে,কিন্তু এই মহামারিতে বিপর্যস্ত সবাই।কিন্তু, যাদের আয় রোজগারের একমাত্র অবলম্বন সামান্য সম্মানি,তাঁদের এই সামান্য ও যদি আটকে যায়,তাহলে কি উপোস থাকবেন উনারা!

আত্ন সম্মান ও মর্যাদার জন্য না পারেন হাত পাততে,না পারেন কোথাও কামলা খাটতে!!

নিশ্চয়, আমরাও চাই না কোন স্যার কে রিকশার পেডেল ঘুরিয়ে জীবনের চাকা ঘুরাতে!চাইনা সিএনজির চালকের আসনে কোন স্যার কে। অথবা কোন রেস্তোরাঁর হেনতেন কাজে দেখতে তাঁদের কে!

 

আমি মনে করি, সংকট মোকাবিলায় যুক্তি তর্ক সমীচীন নয়,চাই যুক্তিযুক্ত সমাধান। ক্লাস ছাড়া বেতন নেবার যুক্তি নেই,এটা অতি সাধারণ লজিক।কিন্তু অর্থনীতি এর সুন্দর একটি সমাধান দিয়েছে!

ফিক্সড কস্ট,আর ভেরিয়েবল কস্ট অর্থাৎ স্থীর বা অপরিবর্তনীয় খরচ, আর আরেকটা চলতি খরচ।ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না,আমি একটি গাড়ি রিজার্ভ করে অর্ধেক রাস্তায় গিয়ে যদি গাড়ি ছেড়ে দেই তাহলেও আমাকে পুর্ণ ভাড়া দিতে হয়।কিন্তু ড্রাইভার যদি মনে করেন,আপনাকে কিছু কম নিতে পারেন, কিন্তু পুর্ণটা তার অধিকার।

আবার অন্যভাবেও বলি স্থায়ী কিংবা স্থির খরচ উৎপাদন শূন্য হলেও দিতে হয়।যেমন বাসা ভাড়া থাকি কিংবা না থাকি তাও দিতে হয়…

বেতনের বিষয়টিও স্থির ব্যয় অর্থাৎ বাধ্যতামূলক পরিশোধ যোগ্য।

 

কিন্তু, দানবিক না হয়ে মানবিক হই,সংকট সকলের, সংকট সবার…তাই পুর্ণ বেতন না হউক অন্তত অর্ধেক মাসের বেতন দিয়ে হলেও প্রতিষ্ঠান গুলো কে বাঁচতে দিন।প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট দের বাঁচাই…

আমাদের যেমন ভরনপোষণ এর প্রয়োজন হয় উনাদের ও স্বজন,পরিজন আছে।সংকটে যুক্তি নয়,সংকটে হই মানবিক।