সর্বশেষ

» করোনা : শুধু সৌদি আরবেই ৮৫০ জন বাংলাদেশির মৃত্যু

প্রকাশিত: ২৬. অক্টোবর. ২০২০ | সোমবার

চেম্বার ডেস্ক:: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার ও বাহরাইনে ১ হাজার ২৮৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। শুধু সৌদি আরবেই ৮৫০ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।

 

এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যু আগের চেয়ে কমে এসেছে। বিশেষ করে গত দুই মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় প্রবাসীদের মৃত্যুর হার জুন ও জুলাই মাসের তুলনায় অনেকটাই কম।

 

রোববার (২৫ অক্টোবর) পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত (জিসিসি) ছয়টি দেশে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার ও বাহরাইন—জিসিসিভুক্ত এই ছয় দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় ১ হাজার ২৮৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন।

 

মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা, সেসব দেশের বিভিন্ন প্রবাসী সংগঠন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে ৮৫০ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৯৮ জন, কুয়েতে ১০৩ জন, ওমানে ৭০ জন, কাতারে ৩৫ জন ও বাহরাইনে ২৭ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন। বিশ্বের ২১টি দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় ১ হাজার ৯৭২ প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু।

 

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে ৩৪০ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ২৯২, ইতালিতে ১৬, কানাডায় ৯, সুইডেনে ৮, ফ্রান্সে ৭, স্পেনে ৫, বেলজিয়ামে ৩ জন, পর্তুগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ২ জন করে এবং ভারত, মালদ্বীপ, কেনিয়া, লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন। অর্থাৎ এই ১৫ দেশে ৬৮৯ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন। সব মিলিয়ে করোনা সংক্রমণে বিশ্বের ২১ দেশে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৯৭২ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

 

বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলের করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে আসছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ওয়েবসাইট। তাদের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে ৮৫০ জনই বাংলাদেশি। দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী থাকেন সৌদি আরবে। সেখানে বেশির ভাগ কর্মী গাদাগাদি করে ডরমিটরিতে থাকতে বাধ্য হন। বাংলাদেশি কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ এটি। আবার যেসব জায়গায় তাঁরা কাজ করেন, সেখানে লোকসমাগমও বেশি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করা, চাকরি নিয়ে শঙ্কা আর অনিশ্চয়তাও প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়েছে। এ ছাড়া করোনায় মারা যাওয়া প্রবাসী কর্মীদের একটি বড় অংশের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা ছিল বলে দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে।

 

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত—এই তিন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া কর্মীদের অধিকাংশই হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁদের অনেকের করোনা শনাক্ত হয়। তবে করোনার সংক্রমণ আর মৃত্যুর সংখ্যা দুই মাস আগের তুলনায় কমলে বাংলাদেশির মূল সংকটটা তাঁদের জীবিকা তথা ভবিষ্যৎ নিয়ে। বিশেষ করে যাঁরা ছুটিতে কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন, তাঁদের ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। এমনকি দেশে থাকা কর্মীদের ইকামা (কাজের অনুমতিপত্র) ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হলেও উড়োজাহাজের টিকিট না পাওয়ায় তাঁদের একটি অংশ এ মাসের শুরুতে ঢাকার রাজপথে ছিলেন দিনের পর দিন।

 

করোনা পরিস্থিতির প্রসঙ্গে সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূত এস এম আনিসুল হক গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, লোকজন আস্তে আস্তে কাজে ফিরছেন। তবে পুরোদমে সবকিছু করোনার আগের পরিস্থিতিতে ফেরেনি। ফলে অভিবাসীদের জীবিকা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

 

করোনা সংক্রমণে সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের গতকালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশি ও কূটনৈতিক সূত্রগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের মধ্যে ১৯৮ জনই বাংলাদেশি।

 

দুবাইয়ের একটি নির্মাণপ্রতিষ্ঠানের কর্মী মোস্তফা আলী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন বেশ কিছুদিন। সুস্থ হওয়ার পর তাঁর সব দুশ্চিন্তা চাকরি নিয়ে। তিনি বলেন, ‘কয়েক লাখ টাকা খরচ করে এসেছি। করোনার ছোবল থেকে মুক্ত হয়ে যখন শুনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনেকের চাকরি থাকবে না, তখন তো চোখের সামনে অন্ধকার দেখি।’

 

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ওমানে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ১৭৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৭০ জন বাংলাদেশি। জানতে চাইলে ওমানে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল হক গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ওমানে করোনার সংক্রমণ আর মৃত্যুর হারটা অনেক বেশি।

অন্যদিকে ইউরোপের দেশগুলো বিশেষ করে ইতালি, স্পেনে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে।

 

ইউরোপের বাংলাদেশ মিশনগুলোর বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, গত দুই মাসে প্রবাসীদের মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও সংক্রমণের হারটা এখন খুব বেশি।

 

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930