সর্বশেষ

» ইসলামপন্থীদের উত্থান: উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ || মোঃ কামরান উদ্দিন

প্রকাশিত: ১৬. অক্টোবর. ২০২৪ | বুধবার

মোঃ কামরান উদ্দিন: বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক বৈধতা ও সামাজিক প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল ২০১৩–এর শাহবাগ আন্দোলনের পর। এর পটভূমি ছিল ২০১০ সালে স্থাপিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্য ছিল ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান। কিন্তু উদ্দেশ্য বিষয়ে সমর্থন সত্ত্বেও পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে এর সমালোচনা হয়েছে। শাহবাগ আন্দোলন শুরু হয় অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের কম সাজা দেওয়া হচ্ছে এই অভিযোগে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার অতি দক্ষতার সঙ্গে আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়।

২০১৩ সালের এই আন্দোলনের বিপরীতে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন ও ছোট ছোট ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো একত্রিত হয়। এপ্রিল মাসে তারা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে । তাদের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবির মধ্যে ব্লাসফেমি আইন ও ইসলাম অবমাননার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানের দাবি ছিল৷ সেগুলো সমাজে একধরনের বিভক্তির সূচনা করে। শাহবাগ ও শাপলা চত্বরের এই দুই আন্দোলন বাংলাদেশের সমাজে সবকিছুকে দুই ভাগে ভাগ করে এবং তীব্র বিভাজন তৈরি করে দেয়। একদিকে কট্টর সেক্যুলারপন্থীরা, অন্যদিকে গোঁড়া ইসলামপন্থীরা।

প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার শাপলা চত্বরে জড়ো হওয়া হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়। কিন্তু পরে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার যতই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে শুরু করে, ততই ইসলামপন্থীদের কাছে টানার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

হেফাজতে ইসলামকে খুশি রেখে নিজেদের রাজনৈতিক বৈধতা পেতে সরকার ২০১৭ সালে পাঠ্যেুস্তকে পরিবর্তন আনে, অমুসলিম লেখকদের রচনা সরিয়ে ফেলে ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে লেডি জাস্টিসের মূর্তি অপসারণ করে। ২০১৭ সালেই সরকার দেশব্যাপী ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১৩ সালের পর থেকে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি ও প্রচলিত রাজনীতির প্রতি অনাস্থা সন্ত্রাসবাদের ভবিষ্যৎ উত্থানকে ত্বরান্বিত করতে থাকে।

গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকে ইসলাম পন্থীদের ব্যাপক প্রভাব আমরা লক্ষ্য করছি। বাংলাদেশের গ্রাম-শহর সব জায়গায় তারা সভা সমাবেশ করছে। ড.মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে আমরা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল হতে দেখছি।

আমি মনে করি,আগামীর সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ইসলামপন্থী দলগুলোর অংশগ্রহণ এবং অংশীদারত্বের সুযোগ অবশ্যই থাকার কথা। তার মধ্য দিয়ে তারা হয় বিকশিত হবে কিংবা জনগণের কাছে এক দুর্বল গোষ্ঠী বলে প্রমাণিত হবে। অতীতে যেসব নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোতে ইসলামপন্থী দলগুলো ভালো ফল করেনি এবং তাদের প্রতি সমর্থন ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছে। ভবিষ্যৎ নির্বাচনেও তাদের অবস্থা একই হবে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু বর্তমান সরকার ইসলামপন্থীদের, বিশেষ করে রক্ষণশীল ইসলামপন্থীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার কারণে সমাজে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তাদের শক্তির চেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে পড়েছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রাজনীতির আলোচনার সূচি অংশ তারাই নির্ধারণ করছে। আশু এই অবস্থার অবসানের সম্ভাবনা নেই। উপরন্তু তা আরও বিস্তৃত হবে বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। ইসলামপন্থীদের এই উত্থান নিয়ে পুরো বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন৷

লেখকঃ সাবেক ছাত্র-ইউনিয়ন নেতা।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

February 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728