লন্ডন প্রবাসী চাচাতো ভাইয়ের জমি রক্ষা করতে গিয়ে মরণাপন্ন কানাইঘাটের ইসমাঈল
নিজস্ব প্রতিবেদক: লন্ডন প্রবাসী চাচাতো ভাইয়ের জমি-জমা ও সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে মরণাপন্ন হলেন সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার ইসমাঈল। গতকাল রাত আনুমানিক বারোটার দিকে কানাইঘাটের হালাবাদী ৩য় খণ্ড নয়াগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত ইসমাঈলকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিলেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, আহত ইসমাঈল নিজের চাচাতো ভাইয়ের জমি-জমা ও সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। তিনি তার চাচা মরহুম শামসুদ্দিনের ছেলে ফরিদ উদ্দিনের জমি-জমা এবং সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে ফরিদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই সালিক উদ্দিন গংদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। ফরিদ উদ্দিন বর্তমানে সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
ফরিদ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে আলাপ করে জানা যায়, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের কারণেই ইসমাঈল নির্যাতনের শিকার হন। তিনি বলেন, ‘আমরা লন্ডনে অবস্থান করছি। বাড়িতে আমি ইসমাঈলকে আমার পরিবারের জমি-জমা এবং সহায় সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব দেই। সে বাড়িতে একা থাকায় সালিক উদ্দিন গংরা ইসমাঈলের ওপর নির্যাতনের সাহস করে।’
ঘটনার যোগসূত্র জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, ‘সালিক উদ্দিনের এহেন সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রম নতুন নয়। দীর্ঘদিন থেকে তার সাথে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। সে পূর্বেও আমার পিতা শামসুদ্দিনকে নির্মম নির্যাতন করে এবং ঘটনাস্থলে তিনি স্ট্রোক করেন। এমনকি সে আমার পিতাকে ক্রমে ক্রমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।’ ঘটনার প্রেক্ষাপট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার চাচারা পূর্বেই আমাদের কাছে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু আমার চাচাতো ভাই সালিক উদ্দিন ২০২০ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার পর ঝামেলা শুরু করে। সে আমাদের জমিগুলো জোর-পূর্বক দখল করে নিতে চায়। এ ঘটনায় একটি গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সকল দলিল-দস্তাবেজ যাচাই-বাচাই করে আমাদের পক্ষে রায় আসে। কিন্তু সে ক্ষমতা প্রদর্শনপূর্বক জমির দখল নিতে চায়। বাধ্য হয়ে আমার বাবা শামসুদ্দিন ২০২০ সালের অক্টোবরের ১৫ তারিখে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরপর কয়েকবার শুনানির পর ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি রায় আমাদের পক্ষে আসে। পরে সালিক উদ্দিন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সেটা খারিজ করে দেয় আদালত। তাই সালিক উদ্দিন তখন পেশি শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জমি-দখলের চেষ্টা করে। এক সময় বাবা বাধা দিলে তাকে প্রচুর মারধর করে। তার নাক-মুখ বেয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। তিনি স্ট্রোক করে জ্ঞান হারান। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তিনি কিছুটা সুস্থ হলেও পরবর্তী সময়ে আবার স্টোক করেন।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন জানান, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সালিক উদ্দিন তার মেয়েকে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অপহরণের চেষ্টা করে । এতে তিনি তার মা, বাবা,মেয়ে ও স্ত্রীকে সিলেট শহরে বাসায় পাঠিয়ে দেন। প্রতিনিয়ত সালিকের দেওয়া মানসিক যন্ত্রণা আর হুমকিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন তার বাবা শামসুদ্দিন। তিনি আবার স্ট্রোক করেন এবং শেষপর্যন্ত ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
ফরিদ উদ্দিন আরও জানান, সালিক উদ্দিন এবং তার সহযোগীরা এমন প্রভাবশালী যে, গ্রামে শামসুদ্দিনের লাশ দাফন করতেও তারা বাধা দেয়। পরে গ্রামের মানুষদের সহায়তায় তার বাবাকে গ্রামে দাফন করা হয়।
তিনি আরো জানান সালিক উদ্দিনরা তাদের জৈন্তা নিবাসী খালাতো ভাইদের ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলায় ফরিদ উদ্দিনকে আসামি করেন।
পরবর্তীতে তারা ফরিদ উদ্দিনের অনুপস্থিতিতে ইসমাঈলকে টার্গেট করে। ফরিদউদ্দিন এর বাড়ির পুকুরের মাছ ও জমিজমার ফসলাদি ভোগে সালিক উদ্দিন গংদের বাধা দিতে থাকলে এক পর্যায়ে
তারা অতিষ্ঠ হয়ে রাতের অন্ধকারে ইসমাইলকে মেরে রক্তাক্ত করে। বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।