২৩ নভেম্বর সিলেটে জমিয়তের গণসমাবেশ সফল করুন: সিলেট জমিয়ত
চেম্বার ডেস্ক: ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আগামী ২৩ নভেম্বর, শনিবার সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্টারি মাঠে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট জেলা উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর শাখার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গণসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে আজ (২১ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট জমিয়ত অফিসে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিলেট জেলা দক্ষিণের সভাপতি মুফতি মুজিবুর রহমান বলেন- আমি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল আতাউল গনী ওসমানীসহ ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া সকল বীর মুক্তিযুদ্ধাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
আমি স্মরণ করছি আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ, সিলেটের সাংবাদিক তুরাবসহ জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে শহীদ হওয়া দেশের সকল সুর্যসন্তাদের।
মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দীর দরখাস্ত করছি শায়খ তজম্মুল আলী, শায়খে কৌড়িয়া, আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী, শায়খ আব্দুল্লাহ হরিপুরী, আল্লামা নুরুদ্দীন গহরপুরী, আল্লামা বশির উদ্দীন শায়খে বাঘা, আল্লামা রিয়াসত আলী চৌঘরী, আল্লামা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী, আল্লামা হাবিবুল্লাহ ভিতরগ্রামী, আল্লামা আব্দুশ শহিদ গলমুকাপনী, আল্লামা হোসাইন আহমদ বারকোটিসহ সিলেট জমিয়তের মরহুম আকাবীরদের। আল্লাহ তায়ালা যেনো তাঁদের সমন্ত খিদমাতকে কবুল করেন।
তিনি আরও বলেন – ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম ও রাজনীতিতে জমিয়তের একটি উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ১৯১৯ সাল থেকে অদ্যাবধি সুদীর্ঘ একশো পাঁচ বছর ধরে জমিয়ত পাক-ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা, ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে।
উপমহাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও পটপরিবর্তনে জমিয়তের অংশগ্রহণ আছে।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ চব্বিশের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে জমিয়ত প্রত্যক্ষভাবে অবদান রেখেছে।
ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর নেজাম কায়েম, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রচার, দ্বীনে ইসলামের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং ইসলাম বিরোধী সকল তৎপরতা রুখে দিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পুরো বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আন্দোলন সংগ্রাম এবং রাষ্ট্র বিনির্মানে জমিয়ত সামনের সারিতে থাকা একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল।শাশ্বত জমিয়তের প্রাণপুরুষ শায়খুল ইসলাম হোসাইন আহমদ মাদানী রাহ.এর সংস্পর্শে ধন্য সিলেট বিভাগে জমিয়তের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে।বৃটিশ আমল থেকে অদ্যাবধি সিলেটের সকল রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আন্দোলনে জমিয়ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
ঐতিহাসিক সিলেট রেফারেন্ডাম, পরবর্তীতে সিলেট বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলন, ভারতীয় নদী আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলন, টিপাইমুখ অভিমুখে রোডমার্চ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ সংক্রান্ত আন্দোলন, শাবিতে মূর্তি নির্মাণ বিরোধী আন্দোলনসহ সকল সংগ্রামে জমিয়ত সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতিতেও সিলেটে জমিয়তের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে।
১৯৪৬ সালের নির্বাচনে আসাম প্রদেশভুক্ত সিলেটে জমিয়তের ২১ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তন্মধ্যে ৩ জন নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখনকার আসাম প্রাদেশিক সরকারে জমিয়তের মাওলানা ইবরাহিম চতুলী শিক্ষামন্ত্রী মনোনীত হয়েছিলেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে অবিভক্ত সিলেটে জাতীয় পরিষদে জমিয়তের ৯ জন ও প্রাদেশিক পরিষদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দেশের অন্যান্য জেলার মতো সিলেটেরও বিভিন্ন আসন থেকে জমিয়তের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।সাম্প্রতিক বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটেও জমিয়ত মাঠে ময়দানে অবদান রেখেছে। ২ আগস্ট সিলেট জেলা ও মহানগর জমিয়তের উদ্যোগে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে এক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিলো।
আন্দোলনে গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্র জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলো, সদর উপজেলা ছাত্র জমিয়তের সহসভাপতি ফরহাদ আহমদ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলো।
এছাড়াও সিলেট মহানগর, সদর ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় কমপক্ষে ২০ জন জমিয়তকর্মী আহত হয়েছিলো। বিপ্লব পরবর্তী বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সিলেট জমিয়ত নেতৃবৃন্দ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
জুলাই আগস্টের রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে এদেশের মানুষ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। জাতির ঘাড়ে চেপে বসা এই জগদ্দল পাথর সরাতে দেশের ছাত্র-জনতাকে রাজপথে নিজেদের তপ্ত খুন ঢালতে হয়েছে। অসংখ্য মায়ের বুক খালি হয়েছে, অগণিত মানুষ পঙ্গু হয়েছে, অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে দিনাতিপাত করছে।
দেশের আপামর জনগণ, ছাত্রজনতা ও রাজনৈতিক দলসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি আমরা অতীব দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, ২৪ এর পরাজিত শক্তি নানাধরণের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফিরে আসার চেষ্টা করছে।
কিছু অসাধু রাজনীতিবীদ পতিত স্বৈরাচারকে রক্ষার চেষ্টায় লিপ্ত। কেউ আবার রাজনীতিতে তাদেরকে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করছেন।অন্তরবর্তীকালীন সরকারের কিছু কার্যকলাপেও আমরা চিন্তিত, উদ্বিগ্ন। উপদেষ্টাদের নিয়োগ ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনিয়ম ও বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বিপ্লবের স্টেকহোল্ডার ও অংশীজনকে মায়নাস করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। স্বৈরাচারের সহযোগী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের খাতির তোয়াজ করা হচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা বিপ্লবে সরাসরি অংশগ্রহণ করে, শহীদ হয়ে, আহত ও পঙ্গু হয়েও অবহেলার শিকার হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বে-ইনসাফ হচ্ছে। বিপ্লবের চেতনা ক্রমশ অবহেলিত ও গৌণ হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়েও নানা সংশয় ও সন্দেহ জন্ম নিয়েছে।
সরকার দেশের অর্থনীতিতে কাঙ্খিত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারছে না, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আমরা পররাষ্ট্রনীতিতে সরকারকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে দেখছি না। বিশেষ করে পতিত স্বৈরাচারকে লালনকারী ও আশ্রয় প্রশ্রয়দানকারী দেশের প্রতি সরকারের নমনীয় আচরণ আমাদেরকে ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন করছে।
রক্তাক্ত গণবিপ্লবের পর বিপ্লবের চেতনা রক্ষা করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলসমূহের পবিত্রতম দায়িত্ব। যারা বিপ্লবকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করবে, জাতি তাঁদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করতে হলে সকল প্রকারের বৈষম্য দূর করে ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
এ লক্ষ্যেই, ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আগামী ২৩ নভেম্বর শনিবার সিলেট রেজিস্টারি মাঠে সিলেট জেলা দক্ষিণ উত্তর ও মহানগর জমিয়তের যৌথ উদ্যোগে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সিলেট বিভাগের মান্যবর ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় উলামায়ে কেরাম বক্তব্য রাখবেন। সম্মেলন উপলক্ষে সিলেট জেলা উত্তর দক্ষিণ ও মহানগর জমিয়তের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং পুরো সিলেটব্যাপী দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমরা আশা করছি ২৩ তারিখ সিলেট রেজিস্টারি মাঠে একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ হবে এবং সিলেটের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য এটি মাইলফলক হবে।নেতৃবৃন্দ গণসমাবেশ সফল করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, আমরা ঐতিহাসিক এই গণসমাবেশে শরীক হতে সর্বন্তরের সিলেটবাসীকে আহবান করছি। সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।সম্মেলনের প্রচার প্রচারণায় প্রিন্ট,অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।সিলেটের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আমরা দোয়া চাচ্ছি আল্লাহ তায়ালা যেনো আগত সমাবেশকে কামিয়াব করেন। দেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যেন এই সমাবেশকে মাইলফলক বানিয়ে দেন। আমীন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা উত্তর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানীগন্জী, সিলেট মহানগর সভাপতি খলিলুর রহমান,মহানগর সেক্রেটারী মাওলানা সিরাজুল ইসলাম,জেলা দক্ষিণের সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাক আহমদ চৌধুরী,মাওলানা নূর আহমদ, মাওলানা ইবাদুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, মাওলানা নসরুল ইসলাম, মাওনালা গোলাম আম্বিয়া কয়েস, মাওলানা আখতারজ্জামান তালুকদার,
শামসি আহমদ, মাওলানা মাহদী আহমদ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, মাওলানা তোফায়েল আহমদ প্রমুখ।