কবি মুহিত চৌধুরীর সাথে বিলেতের সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের মতবিনিময়

চেম্বার ডেস্ক: যুক্তরাজ্য সফররত জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক সিলেটের সম্পাদক ও সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিশিষ্ট কবি ও নাট্যকার মুহিত চৌধুরীর সাথে বিলেতের লেখক-সাংবাদিকদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সাপ্তাহিক সুরমা অফিসে তৃতীয় বাংলা খ্যাত লণ্ডনে বসবাসকারী বিলেতের সাহিত্যি-সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতি অঙ্গনের এক ঝাঁক সক্রিয় ও সুপরিচিতজন কবি মুহিত চৌধুরীর সাথে মতবিনিময়ে অংশ নেন।

সুরমার সাবেক সম্পাদক, বিশিষ্ট কবি ও মরমী তাত্ত্বিক আহমদ ময়েজের সভাপতিত্বে এবং সুরমার বার্তা সম্পাদক কবি কাইয়ূম আবদুল্লাহর সঞ্চালনে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে অতিথি কবি মুহিত চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সুরমার স্পোর্টস রিপোর্টার কবি মুহাম্মদ শরীফুজ্জামান।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রবান্ধিক আকবর হোসেন, লেখক-গবেষক মাওলানা আব্দুল আউয়াল হেলাল, সাংবাদিক ও কমিউনিটি এক্টিভিস্ট বদরুজ্জামান বাবুল, লেখক ও আলোচিত্রী নোমান আহমদ, ফ্রান্স প্রেসক্লাবের সাবের সভাপতি শামসুল ইসলাম, কিউ নিউজের এডিটর এম এ কাইয়ূম, সানরাইজ সম্পাদক এনাম চৌধুরী, কবি-ছড়াকার হিলাল সাইফ, সাংবাদিক ও আবৃত্তিকার আমিমুল ইসলাম তানিম, আবৃত্তিকার ও নাট্যজন কাউন্সিলর মুহিব চৌধুরী, এনটিভি ইউরোপের সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার শামসুল তালুকদার, সাংবাদিক মাহবুব খানশূর, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য ও নতুন দিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক পলি রহমান, বিলেত বাংলা সম্পাদক আলাউর খান শাহীন, সুরমার ডিজিটাল বিভাগের হেড মিনহাজুল আলম মামুন, ক্রাইম রিপোর্টার হাসান আল জাভেদ, বাংলাপেইজ সম্পাদক খালেদ মাসুদ রনি ও সাংবাদিক হাসনাত চৌধুরী প্রমুখ।

কবি মুহিত চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি কখনো ডান-বামের বিভক্তিতে জড়াতাম না। যারাই ভালো লেখালেখি করতেন তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে সাহিত্য চর্চায় মনযোগী ছিলাম এবং এখনো সেটা চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, ব্যতিক্রম ছাড়া সাংবাদিকতা অনেকের সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আত্মঘাতি হয়ে যায়। যার দরুণ অনেকে সাংবাদিকতায় জড়ানোর পর সাহিত্য চর্চা অব্যাহত রাখতে পারেন না। আমি সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মুহিত চৌধুরী বলেন, শুরু থেকেই অনলাইন সাংবাদিকতার ভবিষ্যত আমার কাছে উজ্জ্বল মনে হওয়ায় আমি অনলাইনকে গুরুত্ব দিয়ে নিউজ পোর্টালসহ সিলেটে অনলাইন প্রেসক্লাবের যাত্রা শুরু করি। এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত চৌধুরী বলেন, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ উপমহাদেশের মধ্যে সাহিত্য সংস্কৃতি ও গবেষণার একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান। এখানে গবেষনার অনন্য সুযোগ রয়েছে।

লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ বলেন, কবিদের মনে হতো অনেকটা অস্পর্শী। বিশেষ করে তাদের কবিতার মতো কঠিন ও ভাবগম্ভীর শিল্পসৃষ্টির জন্য মনে হতো তাঁরা যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।মহামারি কোভিটের পর সাহিত্যের আড্ডা-আসর অনেকেটা কমে আসছে উল্লেখ করে তাইসির মাহমুদ বলেন, আমি সুরমাকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা এসব আসর জিইয়ে রেখেছেন। কবি মুহিত চৌধুরীর মতো অন্যান্য লেখকদের নিয়েও সুরমা সবসময় এধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে আড্ডা স্রেফ সময় কাটানো নয়। এসব আড্ডা-আসর থেকে অনেককিছু বেরিয়ে আসে, আমরা অনেককিছু শিখতে পারি।

সভাপাতির বক্তব্যে সুরমার সাবেক সম্পাদক কবি আহমদ ময়েজ বলেন, আমাদের তারুণ্যের খোলস ভাঙার সময় থেকে মুহিত চৌধুরীর কাব্যচর্চার সাথে পরিচিয়ের সূচনা। তারপর তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িয়ে পড়ায় এবং আমেরিকা প্রবাসী হয়ে যাওয়ায় তাঁর সাথে অনেকটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাঁর লেখালেখির সাথে সবসময় জানাশোনা ছিলো। আহমদ ময়েজ বলেন, একসাথে সবকিছু করার কঠিন এবং সবার দ্বারা তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবু মুহিত চৌধুরী কবিতা ছাড়াও সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় বিচরণ করছেন। কবিতা লেখার ধারা সবার নয়, তিনি আমাদের অনেকের চেয়ে ভিন্নধারার কবিতা লেখেন। কবিতার জন্যই অনেকের সাথে আমি সম্পর্কে জড়াই, কবিতার মাধ্যমেই মুহিত চৌধুরীর সাথে আমার সম্পর্কের সূচনা এবং এখনো তা অটুট আছে।

সভার শেষ পর্যায়ে কেক কেটে কবি মুহিত চৌধুরীর জন্মদিন উদযাপন করা হয়।

মতবিনিময়ে উপস্থিত বিলেতের লেখক-সাংবাদিকগণ অতিথি কবি মুহিত চৌধুরীকে একজন মানবতাবাদী লেখক আখ্যায়িত করে মানব কল্যাণে তাঁর কাছ থেকে আরো বেশী সৃজনশীল লেখা এবং বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করেন। মুহিত চৌধুরীর সাহিত্য-সাংবাদিকতা চর্চার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সদ্য প্রকাশিত তাঁর কবিতাগ্রন্থ “নিলামে উঠুক তোমার পৃথিবী” থেকে কয়েক কবিতা পাঠ করা হয়।

উল্লেখ্য, আশির দশকের একজন শক্তিমান কবি হিসেবে সুপরিচি কবি মুহিত চৌধুরী ১৯৯৫ সালে মানবতাবাদী একটি কবিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্যা ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব পোয়েট্রি’ থেকে বিশেষ সম্মাননা লাভ করেন। এ পর্যন্ত তাঁর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ, একটি গীতিগ্রন্থ, দুইটি উপন্যাস, দুটি গবেষণা গ্রন্থ ও একটি নাট্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ বেতারের ‘ক’ শ্রেণীর একজন তালিকাভূক্ত গীতিকার ও নাট্যকার। ইতোপূর্বে তিনি সাংবাদিকতা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে কয়েকবার বৃটেন সফরে এসেছেন। এবার বৃটেনে অবস্থানরত তাঁর দুই ছেলেকে দেখতে এসেছেন। কবি মুহিত চৌধুরী একসময় আমেরিকা প্রবাসী ছিলেন। আমেরিকা থেকে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তনের পর নিজ শহর সিলেটে থিতু হয়ে সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি অনলাইন সাংবাদিকতায় নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।