সিলেটে ইকরা মাদ্রাসার শিক্ষককে মারধর করলেন মুহতামিমের ছেলে
চেম্বার ডেস্ক:সিলেট নগরীর শাহী ইদগাহস্থ ইকরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার মুহতামিমের ছেলে কর্তৃক মাদ্রাসা শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্চনার অভিযোগ করেছেন শাহী ইদগাহস্থ ইকরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষক হাফিজ মাহমুদুল হাসান।
বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের ড. রাগীব আলী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এরকম অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হাফিজ মাহমুদুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, বিগত কয়েকদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহী ঈদগাহস্থ ইকরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার মুহতামিম ও তার সন্ত্রাসী ছেলের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিস্তর সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তা জাতির কাছে আজ পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরতে চাই। আমি মাদ্রাসার অস্বাভাবিক পরিবেশ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সার্বিক অব্যবস্থাপনায় অতিষ্ঠ হয়ে নিয়মতান্ত্রিক মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি রশিদ আহমদ ওরফে রশিদ মকবুল বরাবর মৌখিকভাবে বকেয়া বেতন প্রদানোত্তর স্থায়ী বিদায়ের আবেদন করি। কিন্তু তিনি বলেন চলতি মাস শেষ করে গেলে বকেয়া বেতন পরিশোধ করে স্থায়ী ভাবে বিদায় দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি বলেন, ঘটনার কিছুদিন পর অর্থাৎ গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) মুহতামিমের ছেলে ফাহিম আহমদ (মাদ্রাসার নাইবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালক) আমাকে মাসের উনিশ দিনের বেতন দিয়ে স্থায়ীভাবে বিদায় দেন। আমি তখন জানতে চাই আমাকে পূর্ণাঙ্গ মাস শেষ করে যাওয়ার কথা বলে এখন কেনো বিদায় দেওয়া হচ্ছে। এবং যেহেতু ভাঙ্গা মাসে কোথাও কর্মসংস্থান করতে পারব না তাই ক্ষতিপূরণ স্বরূপ পূর্ণ মাসের বেতন দাবি করি। পরক্ষণেই ফাহিম উগ্র কথাবার্তা ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে আমাকে মারতে উদ্যত হয়। মাদ্রাসার অফিস কক্ষের সিসিটিভি ফুটেজের ভিডিও সবাই দেখেছেন। তিনি লাঠি নিয়ে আমাকে মারতে আসেন। তখন একজন শিক্ষক তাকে আটকে দিতে চাইলে উনাকে ধাক্কা দিয়ে তিনি আমার দিকে ত্যাড়ে আসেন। আমি আত্মরক্ষার্থে অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে হিফজের রুমে চলে যাই। তাও আমার রক্ষা হয় নাই। ফাহিম সন্ত্রাসী কায়দায় শিশু শিক্ষার্থীদের সামনে লাঠি দিয়ে আমার ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে ছাত্ররা আমার অপমান সহ্য করতে না পেরে ফাহিমের দিকে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে আসে।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর আমি ও আমার সহকর্মী বিচার প্রার্থী হলে আমাদেরকে ইকরা মাদ্রাসার অফিসে ডাকা হয়, সেখানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত হন জামেয়া মাহমুদিয়া সোবহানিঘাট মাদ্রাসার বর্তমান মুহতামিম মাওলানা আহমদ কবীর (আমকুনি)। তিনি ইকরা মাদ্রাসার মুহতামিম রশিদের বিভিন্ন অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, ইতো পূর্বে উনার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার ছাত্র বলাৎকারের সুস্পষ্ট অভিযোগও রয়েছে, কিন্তু উনার বাবার পরিচিতি ও রাজনৈতিক প্রভাব ও শহুরে গোণ্ডা পাণ্ডার সাথে উনার সচরাচর চলাফেরার দাপটে তিনি পার পেয়ে যান। এবং বিভিন্ন অপকর্মের পরেও সদা বুক ফুলিয়ে চলেন। বিচারে উপস্থিত হয়ে তিনি আমার কোনো প্রকার জবানবন্দি ছাড়াই একতরফা মুফতি রশিদের পক্ষাবলম্বন করে আমি ও আমার সহকর্মীকে মাদ্রাসার ছাত্রদের উসকে দিয়ে ফাহিমকে অপদস্থ করণের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে আহমদ কবীর মারধরও করেন। অফিসে উপস্থিত এক উৎসুক জনসাধারণের ফেইসবুক লাইভের ভিডিও চিত্র থেকে আপনারা বিষয়টি নিশ্চয় দেখেছেন।
তিনি আরো বলেন, রশিদ ও কবীর উভয়ে আমি ও আমার সহকর্মীকে মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ন করার মিথ্যা অপরাধে উপস্থিত মজলিশে নগদ দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে জিম্মি করে রাখেন। এবং উক্ত বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করার জন্য মুচলেকা নেন। এবং মারধরের পরও আমাদেরকে অপমান, অপদস্থ করে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করেন। পাশাপাশি কয়েকজন ছাত্র যারা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিল তাদেরকেও বহিষ্কার করা হয়
ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে সিলেটের আলেম সমাজ আহমদ কবীরকে বিষয়টি সুরাহা করার প্রস্তাব দিলে আহমদ কবীরের সন্ত্রাসী আচরণে উনারাও ভীত সন্ত্রস্ত হন। শান্ত্বনা স্বরূপ তারা আমাকে এতটুকুই বলেন যে ফেইসবুকে এগুলো বেশিদিন চলবে না দু’একদিন পর সবাই ভুলে যাবে, তাই যেভাবে আছে সেভাবেই চলতে থাকুক।
সংবাদ সম্মেলনে চিলাউড়া পরিষদ, সিলেটের কার্যকরী সদস্য তোফায়েল আহমদ বলেন, হাফিজ মাহমুদ সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ৫ নং চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের চিলাউড়া গ্রামের মরহুম আব্দুল খালিক মাস্টারের সন্তার। সে একজন হাফিজে কোরআন। নম্র, ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের যুবক। চিলাউড়া পরিষদ সিলেট এই ন্যাক্কারজনক অনিয়মের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি উক্ত ঘটনায় জড়িত চিহ্নিত সন্ত্রাসী মুফতি রশিদ, তার ছেলে ফাহিম এবং রশিদের ভাড়াটে গোণ্ডা আহমদ কবীরকে আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ইকরা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি উক্ত বিষয়ের সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণে অবহেলার দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। সন্ত্রাসী মুফতি রশিদ ও তার ছেলেকে মাদ্রাসার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। হাফিজ মাহমুদ ও তার সহকর্মীকে সপদে সসম্মানে ফিরিয়ে আনতে হবে। বহিষ্কৃত ছাত্রদের মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যায় ভাবে আদায়কৃত জরিমানার টাকা ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় আমরা পরবর্তীতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- চিলাউড়া পরিষদ, সিলেটের সভাপতি আবু আসাদ চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক তোফায়েল আহমদ, সদস্য সাইফুল ইসলাম, সারওয়ার জাহান, মুশাররফ কবির, মিজান আহমদ, নয়ন পাশা, জসিম উদ্দিন, শহীদুল ইসলাম শাহান, হাফিজ মাহমুদুল হাসান, শাফিদুল ইসলাম, দোলন আহমদ, এম এ মানিক, মাজহারুল ইসলাম, সজিব আহসান, সোহান মিয়া, হাফিজ ফয়জুল কবির প্রমূখ।