কোম্পানীগঞ্জে বালু-পাথর লুটপাট, সচেতন সমাজের মানববন্ধন

চেম্বার ডেস্ক: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে অবৈধভাবে ধলাই সেতুর নিচ থেকে পালু-পাথর উত্তোলনের ফলে সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে, সেতুটি রক্ষার দাবিতে ধলাই সেতুর উপরে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

আজ রবিবার বিকাল ৩টায় উপজেলার কলাবাড়ী সংলগ্ন ধলাই সেতুতে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শওকত আলী বাবুলের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ও উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের যাতায়াত এই সেতুর উপর দিয়ে। এ ছাড়াও উপজেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র উৎমা ও তুরং ছড়া যাওয়ার একমাত্র রাস্তাও এটি। উপজেলা সদর ও জেলা শহরে যোগাযোগ রক্ষার্থে ২০০৩ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৪৩৪ দশমিক ৩৫ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি তৈরীতে ১২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সেতুর স্থায়িত্ব ধরা হয় ৭৫ বছর।২০০৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সেতুর উদ্বোধন করেন। সেতু নির্মিত হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর, উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ সরাসরি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসে৷তবে এ সেতুর নিচ ও আশপাশ থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে।

গেলো ৫ আগস্টের পর থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িতরা আরো বেপরোয়া হয়ে অবাধে সেতুর খুটির নিচ থেকে বালু লুটপাট করে সেতুটিকে চরম হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এদের হাত থেকে ধলাই সেতু রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী রবিবার বিকাল ৪ টায় ধলাই সেতুর ওপর মানববন্ধন ও সমাবেশ করে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিনিয়তই একটি কুচক্রী মহল স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করে আসছে। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নিরব থাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িতরা। বর্তমানে অবাধে তারা দিনে ও রাতে উত্তোলন করছে । যার ফলে ধীরে ধীরে ধলাই সেতুটি প্রায় ধ্বংসের দারপ্রান্তে পৌছে গেছে। সেতুটি ধ্বংস হয়ে গেলে দুইটি ইউনিয়নের উপজেলা পরিষদের সাথে সড়ক যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।

বক্তারা আরোও বলেন- যেমন ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালু লুট হচ্ছে তেমনি লুট করা হচ্ছে রেলওয়ের সম্পত্তি বাংকার (রোপওয়ে)৷ ধলাই নদীর উভয় পাড়ের কিছু সৈরাচারের ধূসর ও নব্য বিএনপি নামধারীরা চাঁদাবাজী করছে, তাদের সহযোগিতা করছে পুলিশ-প্রশাসন। কোম্পানীগঞ্জে এর আগে এমন অদক্ষ প্রশাসন কখনো দেখিনি। বালু মহালের নামে পিয়াইন নদীর লামনীগাঁও এলাকার কৃষি খেতের জমি ধ্বংস হচ্ছে। দিনে ও রাতে সমানভাবে শত শত নৌকা দিয়ে বাংকারের দুইপাশ লুট হচ্ছে। টাকা নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের নামে। ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালুর নৌকা প্রতি একশো-দুইশো টাকা নেওয়া হয়। নেয় কে? আমরা সবাই জানি একজন আওয়ামীলীগ বাকিরা নামধারী বিএনপি, যারা বিগত চৌদ্দ বছর বিএনপির কিছুতেই সংশ্লিষ্ট ছিলোনা। সেতুর নিচ থেকে টাকা নেয় তারা আর উপরে গাড়ি থেকে টাকা নেয় পুলিশ। সাদা পাথর লোড হয়ে গাড়িতে ওঠার পরে রাস্তা থেকে গাড়ি প্রতি টাকা নিয়ে সাদা পাথরকেও বৈধতা দেয় পুলিশ। সেটা সংবাদের শিরোনাম হয় কিন্তু প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়না। আমরা এর আগে কখনো এরকম অদক্ষ ও নিরব প্রশাসন দেখিনি। প্রতিদিন লুট হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি, লুট হচ্ছে সাদা পাথর, লুট হচ্ছে বাংকার, লুট হচ্ছে ধলাই সেতুর ব্রিজের নিচ থেকে বালু। ধলাই সেতু আজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবী সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করুন, ধলাই সেতু রক্ষা করুন, বাংকার রক্ষা করুন। সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনের। যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমি যে অদক্ষ বলেছি আসলেই অদক্ষ আর না হলে এরা চাঁদাবাজীর অংশ। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যদি এসব চাঁদাবাজী বন্ধ না হয় এবং সরকারি সম্পত্তি লুটপাট বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবো।

মানববন্ধনে আরোও বক্তব্য রাখেন- উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ খন্দকার, বিএনপি নেতা সুলেমান তালুকদার, এনায়েতুল ইসলাম, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ফখরুল আলম, সিনিয়র সহ-সভাপতি তেরা মিয়া, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. ফজল মিয়া, মাসুক মিয়া, ওয়ারিছ তালুকদার, হারুনুর রশীদ, হুমায়ুন রশীদ, হাবিবুর রহমান, আদনান আহমদ, আবু তাহের মুবিন প্রমুখ।