সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সিলেট মহানগর জামায়াতের মতবিনিময় সভা
চেম্বার ডেস্ক: জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন, জামায়াত একটি ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ করতে চায়। যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে আমরা ভিন্নধর্মের হলেও জাতিগতভাবে আমাদের সকলেই বাংলাদেশী। গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হিন্দু-মুসলিম সবাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা নিহত-আহত হয়েছে। যার ফলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর আমরা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে পেরেছি। প্রত্যেক নাগরিকের স্ব স্ব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালনের অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত দিনে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিরোধীতার কারণে ধর্মের নামে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। আমরা ধর্মের নামে বিভক্তির দেয়াল ভেঙ্গে দিতে চাই। সকলে মিলে মিশে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সিলেট হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষেত্রে অনন্য। আসন্ন দূর্গাপুজার উৎসবকে নির্বিঘ্নে পালন করতে হিন্দু ভাইদের পাশে জামায়াত অতীতের মতো পাশে থাকবে। শুধু দুর্গাপুজা নয়, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ভাইদের সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কোন স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে যাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি মঙ্গলবার রাতে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে আসন্ন দূর্গাপুজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় নগরীর একটি অভিজাত রেষ্টুরেন্টের হলরুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে উপস্থিত ছিলেন, রামকৃষ্ণ মিশন সিলেটের সম্পাদক স্বামী চন্দ্র নাথানন্দজী মহারাজ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সিলেট মহানগর সভাপতি ও বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা সভাপতি গোপীকা শ্যাম পুরকায়স্থ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সিলেট জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট বিজয় কৃষ্ণ বিশ^াস, পুজা উদযাপন পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য, পুজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ কুমার দেব, পুজা উদযাপন পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রঞ্জন ঘোষ ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ।
জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, সিলেট অঞ্চল জামায়াতের টীম সদস্য হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, সৌদী আরব জামায়াতের সভাপতি মাওলানা আজাদ সোবহান, মহানগর সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, ড. নুরুল ইসলাম বাবুল ও জাহেদুর রহমান চৌধুরী।
মতবিনিময় সভায় রামকৃষ্ণ মিশন সিলেটের সম্পাদক স্বামী চন্দ্র নাথানন্দজী মহারাজ বলেন, মানুষ হিসেবে সবার একটি হৃদয় হওয়া দরকার। এই সুন্দর উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। এর মাধ্যমে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একটি সম্প্রীতির সমাজ গঠন সম্ভব।
রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন, ঢাকেশ^রী মন্দিরে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছিলেন মসজিদে ইবাদত করতে যদি পাহারা না লাগে মন্দিরে পাহারা লাগবে কেন। আমরা সত্যিকারের এমন সমাজ চাই। যেখানে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র হবে সবার।
এডভোকেট অরবিন্দ দাশ বলেন, গত ৬ আগস্ট জাতির কঠিন মুহুর্তে সিলেটে জামায়াতের সাহস ও উৎসাহ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাবু প্রদীপ কুমার দাশ, বাবু নিত্যঞ্জয় রায়, কালিপদ রায়, বিশ^মন ভগন্যাত, শিলা দাস, বলরাম কোমল চন্দ্র, নিখিল মালাকার, কিরেশ দেবনাথ, শ্রী মন মোহন, নান সিংহ, পলাশ চক্রতবর্তী প্রমূখ।
সভায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মন্দির ও হিন্দু ভাইদের বাসা-বাড়ী পাহারা দেয়ায় এবং পাশে থাকায় জামায়াতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। যে কোন ধরণের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি ঠেকাতে জামায়াতের পক্ষ থেকে সহযোগিত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তারা।
সভায় পুজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নগরীর ১৫১টি পুজা মন্ডবের সভাপতি-সেক্রেটারীসহ ২শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী অংশ নেন।
উভয় নেতৃবৃন্দ, পুজা চলাকালিন অবস্থায় সবধরণের আতশবাজি বন্ধ রাখা, আজান ও নামাজের সময় সবধরণের বাধ্যযন্ত্র বন্ধ রাখার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করেন। আসন্ন দুর্গাপুজাকে নির্বিঘ্নে পালন করতে নেতৃবৃন্দ পরস্পরের সহযোগিতা কামনা করেন।