সর্বশেষ

» প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠক

প্রকাশিত: ৩১. আগস্ট. ২০২৪ | শনিবার

ডেস্ক রিপোর্ট : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠকে তাঁরা দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি না থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। পাশাপাশি একটা যৌক্তিক সময় নিয়ে সংস্কারগুলো করে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজনসহ নানা প্রস্তবনা দিয়েছে দলগুলো। করতে বলেছেন।গতকালের বৈঠকগুলোতে অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি, জামায়াত ছিলোনা। বৈঠকে ছিল জাতীয় পার্টি, হেফাজতসহ ৭টি ইসলামী দল ও এলডিপি। বেলা ৩টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত ৮টায়। সর্বশেষ বৈঠকে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি।

সাত ইসলামী দল :
শনিবার সবার আগে বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম ও ৬টি ইসলামি দলের নেতাদের ওই বৈঠক হয়। এর আগে বেলা ৩টায় যমুনায় যান ইসলামি দলগুলোর নেতারা।

বৈঠকে হেফাজতে ইসলাম ছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন, নেজামে ইসলাম ও খেলাফত আন্দোলনের নেতারা যোগ দেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন চরমোনাই পীর সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম। তার সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমীর ফয়জুল করীম, মহাসচিব ইউনুস আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম।

খেলাফত মজলিসের নেতৃত্ব দেন দলের আমীর আবদুল বাছিত আজাদ। তার সঙ্গে ছিলেন মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমীর সাখাওয়াত হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী মিনহাজুল ইসলাম মিলন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতৃত্ব দেন দলটির আমীর ইউসুফ আশরাফ। তার প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহাসচিব মামুনুল হক ও যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন।হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব সাজেদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন আজিজুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা মুনীর হোসেন কাশেমী। নেজামী ইসলামের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফুল হক। তার সঙ্গে ছিলেন মহাসচিব মাওলানা মোমিনুল ইসলাম।

খেলাফত আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন নায়েবে আমীর মজিবুর রহমান হামিদী। জমিয়তে উলায়ামে ইসলামের একাংশের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিকেল ৪টার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতা ও বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি সময় যাতে না থাকেন, সেই প্রস্তাব তাঁরা দিয়েছেন। এ ছাড়া একটা যৌক্তিক সময় নিয়ে সংস্কারগুলো করে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে বলেছেন। নির্বাচনে অযথা কালবিলম্ব যেন না করা হয়, সেটা উল্লেখ করেছেন।

মামুনুল হক বলেন, ইসলামি দলগুলোর এমন প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একমত পোষণ করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর কালবিলম্ব না করে নির্বাচনের দিকে চলে যেতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন।

যৌক্তিক সময়টা কত দিনের-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, যৌক্তিক সময়ের বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাবনা দেওয়া হয়নি। সুনির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নিয়ে আমরা আলোচনা করিনি।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিটি দল সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেছে জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, মৌলিকভাবে যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার। তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী সব ভোটারের প্রতিনিধিত্ব যাতে জাতীয় সংসদে নিশ্চিত করা যায়, সে ধরনের একটা মৌলিক পরিবর্তনের সংস্কারের প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার যে ব্যবস্থা এবং যেখান থেকেই স্বৈরতন্ত্রের উদ্ভব, এই জায়গায় যেন ভারসাম্য তৈরি করা হয়, সেই প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে জানান মামুনুল হক।

মামুনুল হক বলেন, হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মামলা এবং শত শত ব্যক্তি হতাহত হয়েছেন, অনেকে নিখোঁজ-তাঁদের সন্ধানে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সব হত্যাকা-ের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। যারা দায়ী, যারা নির্দেশদাতা তাদেরও যাতে বিচারের মুখোমুখি করা যায়, সে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে সংলাপের বিষয়ে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাবেন এবং এই আলোচনা থেকে উঠে আসা সংস্কার প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করবেন।

ইসলামী আন্দোলনের ১৩ প্রস্তাবনা :
নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচার দাবিসহ অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে ১৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন দলটির আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পির)। এর আগে ইসলামী আন্দোলনের আমিরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেন।

দলটির আমীর বলেন, একটি গণবিপ্লবের মধ্যদিয়ে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত হয়েছে এই অন্তর্বর্তী সরকার। তাই এ সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক ঐকমত্য রয়েছে। অতএব দেশকে এবং দেশের রাজনীতিকে সঠিক ধারায় নিয়ে আসার ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে সরকার যদি প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেয় তাহলে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তদান ব্যর্থ হবে।

এলডিপি’র ৮৩ প্রস্তাব:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গঠনে ৮৩ প্রস্তাব দিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদ। শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান তিনি। কর্নেল অলি আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এখনো চাঁদাবাজমুক্ত হয়নি। প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করলে একটি পরিচ্ছন্ন দেশ পাওয়া যাবে।

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা অত্যন্ত প্রয়োজন। অন্তর্র্বতী সরকার এখনো বিপদমুক্ত নয়। আওয়ামী লীগের সহযোগী দেশের শত্রুদের কারাগারে নিক্ষেপ করতে হবে। এদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সব পর্যায়ের নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছি। সংস্কারের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, ক্ষমতায় আসার কথা ভুলে যান।

এ সময় কর্নেল অলি আহমেদ আরো বলেন, নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ সময় নিলে অন্তর্বর্তী সরকার সরকার চালাতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30