কোটাবিরোধী আন্দোলন : আজ সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’

চেম্বার ডেস্ক: সব শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আজ সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি সফল করতে সারাদেশের সব শিক্ষার্থীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতারা। এ সময় সমন্বয়কদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আসিফ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটা বাতিলের পরিপত্র হাইকোর্ট থেকে অবৈধ ঘোষণার পর ৫ জুন থেকে আমাদের এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ১ জুলাই থেকে আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে তৈরি করেনি। বরং হাইকোর্টের রায় ও সরকারের নিশ্চুপ ভূমিকার কারণে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা অনেকেই বলছেন। আমরা এ বিষয়ে খুবই সংবেদনশীল। আমরাও চাই না সাধারণ মানুষের কোনো ভোগান্তি হোক। এর দায় সরকারকে নিতে হবে। কারণ আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে থাকা সত্ত্বেও সরকার অথবা নির্বাহী বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাইনি।

নাহিদ আরও বলেন, আমরা একটা চূড়ান্ত ফয়সালা চাচ্ছি। ২০১৮ সালের পরিপত্র ফিরে এলেও আবার বাতিল হওয়ার শঙ্কা থাকবে। তাই আমরা এমন সমাধান চাইছি যেন কোটা নিয়ে বাংলাদেশে আর কখনো সংকট সৃষ্টি না হয়। সে জন্য সংসদে আইন পাস করে অনগ্রসর গোষ্ঠীকে বিবেচনায় রেখে কোটা সমস্যা নিরসনের আহ্বান জানাই। মহামান্য আদালতের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে। আদালতে বিষয়টি গড়িয়েছে, সেটি আদালতে আইনিভাবে সমাধান হবে। কিন্তু কোটার বিষয়ে সরকারের নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের সুযোগ রয়েছে। সরকার চাইলে নতুন পরিপত্র জারি করতে পারে। আমাদের আন্দোলন আর আদালতের প্রেক্ষাপটে নেই। সরকার ও নির্বাহী বিভাগের প্রতি আমাদের এ আন্দোলন। সেই জায়গা থেকে আমরা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম, যা গত দুদিন ধরে চলমান ছিল। সেটি অব্যাহত থাকবে।

নতুন কর্মসূচির বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, সারাদেশে আমাদের যত প্রতিনিধি রয়েছেন, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে- সবাই সমন্বয় করে যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করব। তিনি আরও বলেন, সড়কপথ ও রেলপথ ছাড়া যাতায়াতের অন্য মাধ্যমগুলো এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। ইমারজেন্সি লেন থাকবে যেন অ্যাম্বুলেন্স ও সাংবাদিকরা নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে ঢাবি ক্যাম্পাসে কর্মসূচির পক্ষে প্রচার চালানো হয়।
সর্বশেষ চার দফার পরিবর্তে একদফা দাবির কথা জানানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। সেটি হলো- সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।

কোটা পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাবির দুই শিক্ষার্থী, যারা কোটাপদ্ধতির সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষের আইনজীবীদের একজন ব্যারিস্টার হারুনুর রশীদ বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যে আবেদন করেছে, তা বিচারাধীন। এটি থাকাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান চেম্বার কোর্টের অনুমতি নিয়ে একটি সিএমপি (হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে) ফাইল করছেন। আজ চেম্বার আদালতে এর শুনানি হবে।