কুশিয়ারা অঞ্চলে তানিয়া ‘হত্যার’ বিচার দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ || আটক ১

গোলাপগঞ্জ সংবাদদাতাঃ গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ সরকারী কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার ‘হত্যার’ বিচার দাবীতে আন্দোলনরত কুশিয়ারা অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল (রবিবার) দুপুরে স্থানীয় চন্দরপুর বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনছুর আহমদ সহ ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গত রাতে রাহিম আহমদ নামে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। আটক শিক্ষার্থী সহ অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করেছে।

জানা যায়,গত ১৫ জুলাই উপজেলার সুনামপুর গ্রামের ফলিক মিয়ার মেয়ে তানিয়া আক্তার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্বহত্যা করে। এ ঘটনার পর অভিযোগ উঠে যে,ঢাকা দক্ষিণ সরকারী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি বাণিজ্যে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের অপমান সহ্য করতে না পেরে তানিয়া আত্বহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।

এ অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই ক্ষোব্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। ‘কুশিয়ারা স্টুডেন্ট ডেভলাপমেন্ট কাউন্সিল’ নামক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিচার দাবীতে কলেজে বিক্ষোভ আহ্বান করে। গতকাল (রবিবার) ঢাকা দক্ষিণ সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে তারা বিক্ষোভ বের করতে চাইলে ছাত্রলীগের হামলায় তা পন্ড হয়ে যায়।

পরবর্তীতে কুশিয়ারা অঞ্চলের ক্ষোব্ধ শিক্ষার্থীরা চন্দরপুর-সুনামপুর সেতুর সম্মুখ রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। তারা দরিদ্র শিক্ষার্থী তানিয়ার আত্বহত্যার ঘটনাকে পরোক্ষ ‘হত্যা’ আখ্যা দিয়ে এর সাথে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচার দাবী করে। এসময় রাস্তার দুপাশে ব্যাপক যানবাহন আটকা পড়ে।

সংবাদ পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনছুর আহমদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। ক্ষোব্ধ শিক্ষার্থীরা এসময় মনছুর আহমদের উপর চড়াও হলে পুলিশ লাটিচার্জ শুরু করে।আন্দোলনকারীরা তখন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশী হামলার জবাব দেওয়া শুরু করলে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে।

আন্দোলনকারীদের ছোঁরা ইটের আঘাতে এসময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২ জন পুলিশ সদস্য আঘাতপ্রাপ্ত হন।

এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে রাস্তায় আটকে পড়া যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

এদিকে এ ঘটনার জেরে গত রাতে পুলিশ আন্দোলনকারীদের বাড়িতে ব্যাপক অভিযান চালায়। এসময় আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। তার নাম রাহিম আহমদ। সে বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের দেবারাই গ্রামের মৃত পংকি মিয়ার ছেলে। সে ‘কুশিয়ারা স্টুডেন্ট ডেভলাপমেন্ট কাউন্সিল’ নামক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। তার বাবা তিলপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন। ২০১৮ সালে দূর্বৃত্তদের হামলায় তিনি নিহত হয়েছিলেন।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,আন্দোলনের নামে কিছু সরকার বিরোধী শিক্ষার্থী রাস্তায় অরাজকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। পুলিশ তাদেরকে হঠানোর জন্য রাস্তায় নামার পর তারা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের উপর হামলা করেছে। পুলিশ সে হামলা প্রতিহত করে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।’

ওসি আরো দাবী করেন যে,গতকালকে হামলা ও অরাজকতার মূল নেতৃত্বদাতা রাহিম আহমদকে আটক করা হয়েছে। তাকে ১নং আসামী করে অর্ধশতাধিক হামলাকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ সকল আসামীদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।