পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে অবৈধ ইট ভাটা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই
- আশরাফুল ইসলাম : সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ইট ভাটার কালো ধোঁয়া দূষিত করছে পরিবেশ। ইট তৈরির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় মাটি। যা সংগ্রহ করা হচ্ছে কৃষি জমি থেকে। ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।
ইট উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। দেশে ৭ হাজারের বেশি ইটভাটা রয়েছে। বছরে প্রায় ২৩ বিলিয়নের বেশি ইট বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে।ইটভাটা গুলো থেকে নির্গত দূষিত উপাদানের প্রাদুর্ভাবে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, বছরে প্রায় ১৫ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে যোগ হচ্ছে।
অন্যদিকে ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে দূষিত উপাদানও যোগ হচ্ছে। এসব দূষিত উপাদানের মধ্যে পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু উভয়ের জন্য পার্টিকুলেট ম্যাটার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইটভাটা থেকে নির্গত এই দূষিত উপাদান মানবদেহে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে রেসপিরেটরি সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেশি দেখা যায়।
কৃষি জমির ওপরও ইটভাটার ঋণাত্মক প্রভাব রয়েছে। সাধারণত জমির উপরের মাটিতে জৈব পদার্থের উপস্থিতির কারণে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যদি ওই উপরের মাটি প্রতিনিয়ত সরিয়ে ইট তৈরিতে ব্যবহার হয়, তাহলে জমির উর্বরতা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাবে। মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় ভবিষ্যতে মোট কৃষিজ উৎপাদনের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ৮ নং তিলপাড়া ইউনিয়নের দাসউরা গ্রামে আবাসিক এলাকায় একটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা এমাদ উদ্দিন,রমিজ উদ্দিন সহ আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধ ইটভাটা স্থানীয় এলাকায় বিরুপ প্রভাব ফেলছে।
সাধারণত এই সকল ইটের ভাটা বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজ বিভিন্ন প্রকার প্রতিস্থানীক এলাকার আসে পাশে করা বৈধ নয়।
দাসউরা গ্রামের আশেপাশে প্রায় ৮ টি আবাসিক গ্রাম রয়েছে। দাসউরা বাজারের পাশে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি আলিম মাদ্রাসা এবং চার টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে দাসউরা বাজারের পাশে আবাসিক এলাকায় ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। এই ইটভাটা আবাসিক এলাকায় থাকায় সাধারন মানুষ এর নানা প্রকার রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে ছোট ছোট শিশুদের শারিরিক গঠন তথা স্বাস্থের ক্ষতি হচ্ছে। ইটের ভাটার কালো বিষাক্ত ধোয়ার কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
দাসউরা গ্রামের সর্বস্তরের জনগণ প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট লিখিত দাবী জানিয়েছিলেন অবৈধ এই ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। এই আবেদনের বছরখানেক পার হলেও কোন এক অজানা কারণে অবৈধ এই ইটভাটা বন্ধ করা হচ্ছে না।
পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য এরকম অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষমতা এবং প্রভাব বিবেচনায় কাউকে ছাড় নয়। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ হোক-এটাই আমাদের দাবী।
লেখকঃ আশরাফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী-বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ।