কানাইঘাটে রাস্তা-ঘাট থেকে লুট হচ্ছে ভারতীয় চিনি ॥ বেকায়দায় চোরাকারবারীরা
কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ সিলেটের কানাইঘাটে বেপরোয়া ভাবে চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় রাস্তা-ঘাটে ভারতীয় চিনি লুটের ঘটনা বেড়েই চলছে। থানা পুলিশ নির্বাচন ও বিরোধী জোটের হরতাল অবরোধ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় চোরাকারবারীরা এই সুযোগে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাতের বেলা কানাইঘাটের পৌর শহরের সড়কগুলো সহ বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট থেকে দুর্বৃত্তরা দলবেধে বিশেষ করে ভারতীয় চিনি, চা-পাতা, নাসির বিড়ি সহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী চোরাকারবারীদের কাছ থেকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বেশ বেকায়দায় পড়েছে চোরাকারবারী চক্র। কারন ভারতীয় অবৈধ মালামাল লুটের ঘটনা ঘটলেও থানায় অভিযোগ করতে পারছে না চোরাকারবারীরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে সীমান্তবর্তী সুরইঘাট এলাকা থেকে ৬৫ বস্তা ভারতীয় চিনি বোঝাই একটি টাটা পিকআপ গাড়ী বিয়ানীবাজার উপজেলায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে কানাইঘাট পৌরসভার নন্দিরাই বাইপাস মোড়ে ভারতীয় চিনি বোঝাই পিকআপটি পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্তরা পিকআপটির গতিরোধ করে চালককে জিম্মি করে চিনি বোঝাই পিকআপটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। চোরাকারবারীরা চিনি বোঝাই পিকআপ গাড়ী উদ্ধার করার জন্য পৌরসভার আশপাশ এলাকায় খোঁজাখুজির একপর্যায়ে মনসুরিয়া পয়েন্টে পরিত্যক্ত অবস্থায় পিকআপ গাড়ীটি খোঁজে পান, কিন্তু ভারতীয় ৬৫ বস্তা চিনি ও গাড়ীর চালকের কোন সন্ধান পাননি।
এর আগের দিন বুধবার রাতে পৌরসভার বায়মপুর গ্রামের পাশে দুর্বৃত্তরা ৩ বস্তা চিনি বোঝাই একটি অটোরিক্সা (সিএনজি) গাড়ী আটকিয়ে চালককে মারধর করে নগদ ২০ হাজার টাকা ও চিনি সহ অটোরিক্সাটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে খোঁজাখুজি করে খালি সিএনজি গাড়ীটি কানাইঘাট সরকারি কলেজের পাশে পাওয়া যায়। দুই সপ্তাহ পূর্বে কানাইঘাটের বাংলাবাজার থেকে ভারতীয় চিনি বোঝাই আরো একটি ট্রাক খোঁয়া যায়। এছাড়াও পৌরসভার মহেশপুর পাকা সড়ক, গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, সুরইঘাট সড়ক ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দুর্বৃত্তরা রাতের বেলা ভারতীয় পণ্য সামগ্রী বোঝাই গাড়ী আটক করে হুমকি-ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মালামাল এবং নগদ টাকা লুটে মেতে উঠেছে।
অপরদিকে এসব দুর্বৃত্তরা সুরমা নদীর উপর মুশাহিদ সেতুর উভয় পাশে অবস্থান করে ভারতীয় চিনির গাড়ী আটক করে নগদ টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু দুর্বৃত্তরা ভারতীয় এসব মালামাল বোঝাই পিকআপ, মিশুক রিক্সা আটক করলেও টাকার বিনিময়ে পরবর্তীতে মালামাল সহ গাড়ী ছেড়ে দিয়ে থাকে।
একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দুর্বৃত্তরা ভারতীয় চিনি, চা-পাতা বোঝাই গাড়ী আটক করতে বিভিন্ন সড়কের মোড়ে সারারাত অবস্থান করে থাকে। ভারতীয় চিনি বোঝাই গাড়ী আসার সংবাদ পাওয়া মাত্রই তারা মোটরসাইকেল, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চিনির গাড়ী লুট করে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় চিনির ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকজন জানিয়েছেন, ভারত থেকে সীমান্ত এলাকা দিয়ে চিনি আনার পর বিক্রি ও পরিবহনের জন্য অনেক জায়গায় নিয়মিত তারা মাসুহারা দিয়ে থাকেন। কিন্তু গত ৩/৪ মাস থেকে দুর্বৃত্তরা রাস্তা-ঘাট থেকে চালকদের মারধর করে দেশীয় অস্ত্রের হুমকি-ভয়ভীতি দেখিয়ে গাড়ী সহ চিনি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় টাকার বিনিময়ে তারা চিনি ও গাড়ী দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে তাদের।
এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে থানা পুলিশ সক্রীয় ভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের টানা অবরোধ-হরতাল দেয়ার কারনে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশ ব্যস্ত রয়েছে। রাস্তা-ঘাট থেকে ভারতীয় চিনি নিয়ে যাওয়ার দু’একটি সংবাদ আমরা জানতে পেরেছি। তবে কেউ এ নিয়ে এখন থানায় অভিযোগ করেনি।