কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা ॥ রোগীরা সেবা বঞ্চিত
বদরুল আলম, কানাইঘাট প্রতিনিধি: সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, স্বজনপ্রীতি, জনবল সংকট, সময় মতো ডাক্তার না থাকা, ঔষধ বিতরণে অনিয়ম, রোগীদের সঙ্গে নার্সদের দুর্ব্যবহার,খাওয়ায় অব্যবস্থাপনা ও যন্ত্রপাতি অচল থাকা আর অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতায় এ বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কানাইঘাট উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ । ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অফিস করার নিয়ম থাকলেও এ হাসপাতালে ঘটে তার উল্টো। গত মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে হাসপাতালটি পরিদর্শন করলে এ বেহাল চিত্রই ফুটে ওঠে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সম্প্রতি সময়ে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ।কিন্তু শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় হাসপাতালটিতে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার প্রায় ৩ লাখ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থাপন করা হয় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালটি বর্তমানে সরকারের প্রচেষ্টায় ১০০ শয্যা বিশিষ্ট উন্নীত হলেও চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি এখনো।১০০ শয্যার এই হাসপাতালের জন্য ১৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেনে মাত্র ১০ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব মিলিয়ে মোট পদ সংখ্যা আছে ৯৭ টি,কর্মরত আছেন মাত্র ৫৯ জন, শুন্য আছে ৩৮ টি পদ।
ডাক্তারদের পদ ১৮ টি পদে আছেন ১০ জন খালি ৮ টি, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার ৪৯ টি পদে আছেন মাত্র ৩১ জন, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তার ২১ টি পদে আছেন ১০ জন, গাইনি ১ জন, ডেন্টাল পদে কোন চিকিৎসকই নেই। কর্মরত ডাক্তার, নার্সসহ যারা সরকারি বেতন নিচ্ছেন তারা অনেকেই হাসপাতালে উপস্থিত থাকেননা বলে অভিযোগ রয়েছে।
রোগী ও স্বজনরা অভিযোগ করেন, ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে জরুরী বিভাগে ডাক্তার না পাওয়ায় নুরুদ্দিন(৬০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি সদর ইউনিয়নের ছোটদেশ গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে।রোগীরা আরো বলেন, বিনামূল্যের সরকারি বরাদ্দের ঔষধ পান না, তারা নার্সদের দুর্ব্যবহার, খাওয়ায় অব্যবস্থাপনাসহ অপরিষ্কার সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানান।
এখানকার ডাক্তাররা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে হারবালের ঔষধ লিখে দেন বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ। ডাক্তাররা ঠিকমতো আসেননা বলে জানান অনেকে। এতে রোগীদের রোগও ভালো হচ্ছে না সহজে।
ইমারজেন্সিতে জুয়েল আহমদ তিনি চিকিৎসা দিচ্ছেন রোগিদের। চিকিৎসক সম্পর্কে বর্তমান ডিউটিরত ডাক্তার হিল্লোল শাহ এর ডিউটি থাকলে তিনি কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাহিরে কোথায় আছেন উনাকে ফোন দেন। সাধারণ রোগিরা জানান উপজেলার ডাক্তার গণ তাদের ডিউটি ছেড়ে চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সামান্য জটিল রোগ হলে ওসমানী হাসপাতালে রেফার্ড করে দায় ছাড়া হন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। বাকি দশজন চিকিৎসকের একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার। অল্প সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসক সঙ্কটের পাশাপাশি এই হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। হাসপাতালের দুটি এক্স-রে মেশিন ২০০৫ সাল থেকে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে এক্স-রে করতে সাধারণ রোগীদের বাইরে যেতে হয়। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। এতে করে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উজ্জল কান্তি দাস বলেন,কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সীমিত সংখ্যক ডাক্তার ও কর্মচারী থাকায় সঠিক ভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।