কানাইঘাটের কাড়াবাল্লার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
চেম্বার ডেস্ক: কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের কাড়াবাল্লা বিদ্যানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক খানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় কানাইঘাট প্রেসক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয়ের ভূমিদাতা সদস্য কাড়াবাল্লা গ্রামের মৃত আব্দুল হকের পুত্র বদরুল হকের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফারুক আহমদ বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক খানের নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছেনা। যার কারণে বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছরে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রধান শিক্ষক এনামুল হক খান অনিয়ম ও জালিয়াতিসহ নানা খাতের টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের শতাধিক অভিভাবক সদস্য সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ স্বাক্ষরিত লিখিত দরখাস্ত দায়ের করেও কোন প্রতিকার তারা পাননি। যার কারনে প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে গত বছরের ২৭ অক্টোবর বিদ্যানিকেতনের ভূমিদাতা, প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষানুরাগী, সরকারী চাকরিজীবি এমন ১০/১২ জন সাক্ষীর সহযোগিতায় বিভিন্ন অনিয়ম, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাত, ৪ বছরে হিবাসের গড়মিল, ১৭ লক্ষ ৩০ হাজার ২৬০ টাকা তছরুফের অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক খানের বিরুদ্ধে এনে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন কাড়াবাল্লা বিদ্যানিকেতনের ভূমিদাতা সদস্য বদরুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারুক আহমদ আরো বলেন, ২০২২ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর আদালত দরখাস্ত মামলাটি তদন্তের জন্য সিলেট জেলা গোয়েন্দ পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু বারবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করার কারণে এখন পর্যন্ত আদালতে তদন্ত রিপোর্ট প্রেরণ করা হয়নি। এমনকি ২০১৪ সালের ৬ মে থেকে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি না থাকার কারণে মামলা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইচ্ছামতো বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতের আরো প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সাক্ষাত করলে ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারী এডহক কমিটি অনুমোদন পায়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের একান্ত অনাগ্রহের কারণে এ পর্যন্ত ৬ মাস মেয়াদের ৪টি এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হচ্ছেনা।
সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট বিদ্যালয়ের এমপিও ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ৮ জনের মধ্যে ৭ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক খানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যানিকেতনের সভাপতি বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের কোন সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ার কারণে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন কৌশলে এই দীর্ঘ সময়ে কমিটিবিহীন বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে কোন প্রকার নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে অর্থ আত্মসাতসহ ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষকদের সাথে অসৌজনমূলক আচরণ করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ দায়ের করা হলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে এবং বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের পরিচয় দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে থাকেন।
কানাইঘাটের লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের কাড়াবাল্লা বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক খানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয়। সেই সাথে বিদ্যালয়ে নিয়মিত প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ এবং দ্রুত পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কাড়াবাল্লা বিদ্যানিকেতনের ভূমিদাতা সদস্য বদরুল হক, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, কাড়াবাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমিদাতা সদস্য সমাজসেবী শরিফ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল বাছিত চৌধুরী, কাড়াবাল্লা বিদ্যানিকেতনের ধর্মীয় শিক্ষক বদরুল আলম, অফিস সহকারী নিয়ামত হোসেন, বিদ্যানিকেতনের ভূমিদাতার পরিবারের সদস্য এনায়েত হুসেন।