সিলেটে অনলাইন জুয়ার গডফাদার আওয়ামী লীগ নেতা রজত কান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটে জুয়া খেলায় ক্রমেই বাড়ছে আসক্তি। এই খেলায় কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই বলে যত্রযত্র বসছে এমন আসর। ফলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই চলছে এমন সর্বনাশা জুয়া খেলা। সর্বনাশা এই স্রোতে প্রতিদিন নি:স্ব হচ্ছে যুবসমাজ। শুধুমাত্র একটি স্মার্ট ফোন দিয়েই চলে এই খেলার আসর। ভূমিকায় থাকে একটি ওয়েবসাইট। এ সাইটগুলো নেট দুনিয়ায় ‘বেটিং সাইট’ ও অনলাইন ‘ক্যাসিনো’ নামে পরিচিত। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লীগ খেলাকে কেন্দ্র করে বেটিং তথা বাজি ধরা চলে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সুপার লাইক নামক সাইটটি। এই সুপার লাইক সাইটটি কার নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, কিভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি এ নিয়ে সংবাদপত্রে খোলা কলাম লিখেছেন ফ্রিল্যান্সার মারুফ আহমদ। নিম্ন তার লেখাটি পাঠকদের উদ্দেশ্য তুলে ধরা হলো।

………………………………………………………………………….

সিলেটে সুপার লাইক নামে অনলাইন জুয়ার গডফাদার আওয়ামী লীগ নেতা রজত কান্তি দাস।
রজত কান্তি দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন থেকে অনলাইন ভিত্তিক সুপার লাইক নামে জুয়া পরিচালনা করে আসছেন। এতোদিন গোপন থাকলেও এবার একের পর বেরিয়ে আসছে অনলাইন জুয়ার তথ্য। বহুদিন ধরে অনলাইনে চলে আসছে জুয়ার রমরমা ব্যবসা। এতে করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠছেন রজত কান্তিসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
জানা যায়, রজত কান্তি সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া নাট্যমঞ্চ সিলেট ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি। এসব পদ পদবীর আড়ালে চলে অবৈধ টাকা ইনকামের হরিলুট।
রজত কান্তির এসব ব্যবসাকে শেল্টার দিচ্ছেন খোদ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি সহ রাজনৈতিক নেতারা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশের বাইরে থেকেই পরিচালিত হয় এসব জুয়ার সাইট। বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার পাশাপাশি আছে বেটিং (বাজি) ব্যবস্থাও।

সেগুলোকে আলাদাভাবে বেটিং সাইট নামে ডাকা হয়। এছাড়া লটারি ধরাও জুয়াড়িদের কাছে বেশ প্রিয়।
ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিবন্ধিত হওয়া জুয়া ও বেটিং সাইটগুলোই বেশি পরিচিত দেশের জুয়াড়িদের কাছে।
এসব জুয়ার সাইটে জুয়াড়িরা অনলাইনেই নিবন্ধন করেন।

জুয়ায় অংশ নিতে মূল্য পরিশোধ করা যায় ক্রেডিট কার্ডে। যাদের ক্রেডিট কার্ড নেই অথবা যেসব সাইটে বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধন করা যায় না সেখানেও আছে বিকল্প ব্যবস্থা।
জুয়ার সাইটগুলোর জন্য ‘এজেন্ট’ হয়ে কাজ করে একদল লোক। তারাই ভিন্ন দেশ থেকে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া এবং টাকা পরিশোধের কাজ করে দেন। জুয়াড়ি শুধু বাংলাদেশ থেকে অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করেন। আর ‘হার্ড ক্যাশ’ দেশের বাইরে চলে যায় হুন্ডির মাধ্যমে। তবে কেউ জুয়ায় জিতে গেল সেই অর্থ কিভাবে দেশে আসে সেটি এখনও পরিষ্কার নয় সংশ্লিষ্টদের কাছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সুপার লাইক অনলাইন জুয়ার আসরের নাম বেশি শোনা যায়।

সুবিদবাজারের এক ব্যবসায়ী বরকত উল্লাহ (ছদ্মনাম) বলেন, দেশের বাইরে থেকে আমার অ্যাকাউন্ট করা। এখানে এক এজেন্টের মাধ্যমে সব কাজ করি। জুয়ার টাকা ওকেই দেই, মোবাইল ওয়ালেটে। আবার আমি টাকা জিতলে সেও মোবাইলে দেয় আমাকে।

জুয়ায় অংশগ্রহণ অনলাইনে হয় বলে এমন জুয়া নিয়ন্ত্রণে আনাও বেশ কষ্টসাধ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য।

পাশাপশি বর্তমানে উঠে আসা সাইটগুলোর প্রতি নজর রাখছে সিলেট মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সাইবার ক্রাইমের ইউনিট। ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, জুয়া বা বেটিং সাইটগুলোর দিকে আমাদের নজর আছে।
আমরা শীঘ্রই জুয়ার এসব সাইট গুলোর প্রতি অভিযান চালাবো।

অর্থের লেনদেন সম্পর্কে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হয়। এই বিষয়টি সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ থেকে দেখা হয়। আর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যেসব লেনদেন হয় সেগুলো আমরা দেখছি।