সিলেটের মাঠে আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার : টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হতাশার গল্প বহুদিনের। বাতাসে কান পাতলেই শোনা যেত হাহাকার। দিন বদলের হাওয়ায় সেই বাতাসে এখন সাফল্যের গান। ড্রেসিংরুম থেকে ভক্তদের হৃদয়-সবখানে স্বস্তির রেণু। বাংলাদেশ লিখছে একের পর এক জয়ের গল্প। সেই গল্পের নয়া অর্জন আফগান বদ। রশিদ-মুজিবদের স্পিনকে তুড়ে মেরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল লাল-সবুজের দেশ।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আফগানিস্তানের সামর্থ্যের কথা জানে ক্রিকেট দুনিয়া। বিশেষ করে স্পিন আক্রমণে দলটি অনন্য উচ্চতায়। এবার সেই আফগানিস্তানকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াটওয়াশ করে সিলেটে জয়োৎসব করলো বাংলাদেশ।

সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিনিটের মতো। তাতেই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার আলগা চিত্র ফুটে উঠেছে। মাঠ পরিচর্যা, পরিদর্শন আর আলাপ মিলিয়ে ঘণ্টাখানের পরে তিন ওভার কমিয়ে শুরু হয় ম্যাচ। তাতে সুবিধা করতে পারেনি আফগানিস্তান। ১১৬ রানে আটকে যায় সফরকারীরা। বৃষ্টি আইনে ৬ উইকেটের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে টাইগাররা।

আফগানরা ৭ উইকেটে ১১৬ রান করলেও বৃষ্টি আইনে জয়ের জন্য ১৭ ওভারে ১১৯ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ওপেনিং জুটিতে ৬৭ রান যোগ করেন লিটন দাস ও আফিফ হোসেন। আফগানদের শুরুর চ্যালেঞ্জ থামিয়ে পাওয়ার-প্লের ৫ ওভারেই বিনা উইকেটে ৫০ রান তুলে লিটন-আফিফ জুটি।

১০ম ওভারে মাথায় এগোতে থাকা লিটন-আফিফের উদ্বোধনী জুটি থামান মুজিব উর রহমান। মুজির স্পিনে নাকাল হয়ে মাত্র ১ রানের ব্যবধানে একই ওভারে বিদায় নেন লিটন দাস এবং আফিফ হোসেন। ৩৬ বলে ৬ চারে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন লিটন। আর আফিফের ব্যাট থেকে আসে ২ ছক্কায় ২০ বলে ২৪ রান। দলীয় ৬৮ রানে দ্রুত ২ উইকেট হারালে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলের বিপর্যয় বাড়িয়ে ৬ বলে ৪ রান করে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্তও।

বাংলাদেশকে সেখান থেকে টেনে তুলেন সাকিব আল হাসান এবং তাওহিদ হৃদয়। ২০ বলে ৩১ রানের মাঝারি জুটিতে জয়ের ভিত গড়ে দেয় সাকিব-হৃদয় জুটি। তবে জয় থেকে ১২ রান দূরে থাকতে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন হৃদয়। দলীয় ১০৭ রানে হৃদয় বিদায় নিলেও শামীম পাটোয়ারিকে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক সাকিব। ১৬.১ ওভারে ৪ উইকেটে ৫ বল হাতে রেখে আফগানদের ১১৯ টপকে যায় বাংলাদেশ। সাকিব ১১ বলে ১৮ ও শামিম ৭ বলে ৭ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।

এর আগে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে সিলেটে টসে জিতে আফগানদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভারেই তাসকিনের বলে সাজঘরে ফেরত যান আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে আবারও তাসকিনের আঘাত। লিটন দাসের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ৫ বলে ৪ রান করা হযরতউল্লাহ জাজাইকে বিদায় করেন তাসকিন।

বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আফগানিস্তান যখন চাপে তখনই নেমে আসে বেরসিক বৃষ্টি। আগেই অনুমেয় ছিলো বৃষ্টি হানা দিতে পারে সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুই ম্যাচে। অবশেষে তাই হলো। বৃষ্টি থামলে তিন ওভার কমিয়ে খেলা নির্ধারণ হয় ১৭ ওভারের।

খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ৭ ওভার ২ বলে ৩৯ রান করেন আফগান ব্যাটাররা। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে দলীয় ৪৮ রানের মাথায় মোহাম্মদন নবিকে (২২ বলে ১৬) হারালে তৃতীয় উইকেটের পতন হয় সফরকারীদের। ধারাবাহিকভাবে আফগানদের চাপে রেখে দলীয় ৬২ রানে ইবরাহিম জাদরান এবং ৬৭ রানের মাথায় নাজিবুল্লাহ জাদরানকে তুলে নেন সাকিব আল হাসান। ২৭ বলে ২২ রান করেন জাদরান আর নাজিবুল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ৩ বলে ৫ রান।

শেষ দিকে আফগানদের হয়ে লড়াই করেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই এবং করিম জানাত। তবে ১৬ ওভারের মাথায় এই জুটির ভাঙন ধরান মুস্তাফিজুর রহমান। ২০ বলে ২ চার এবং ১ ছক্কায় ২৫ রান আসে ওমরজাইয়ের ব্যাট থেকে। শেষ ওভারে এসে করিম জানাতকে ফিরিয়ে আফগানিস্তানকে ফের ধাক্কা দেন তাসকিন আহমেদ। ১৫ বলে ২০ রান আসে করিমের ব্যাট থেকে।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ১৭ ওভার শেষে আফগানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১১৬।বাংলাদেশের হয়ে সর্বাধিক ৩টি উইকেট নেন পেসার তাসকিন আহমেদ। আর ২টি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান এবং মুস্তাফিজুর রহমান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

আফগানিস্তান : ১৭ ওভারে ১১৬/৭ (গুরবাজ ৮, জাজাই ৪, জাদরান ২২, নবী ১৬, নাজিবুল্লাহ ৫, জানাত ২০, ওমরজাই ২৫, রশিদ ৬, মুজিব ১; তাসকিন ৪-০-৩৩-৩, হাসান ৩-০-২০-০, নাসুম ৪-০-১৫-০, মুস্তাফিজ ৩-০-৩০-২, সাকিব ৩-০-১৫-২)।
বাংলাদেশ : ১৬.১ ওভারে ১১৯/৪ (লিটন ৩৫, আফিফ ২৪, শান্ত ৪, সাকিব ১৮, তাওহিদ ১৯, শামিম ৭; ফারুকি ৩-০-১৯-০, ওয়াফাদার ৩.১-০-৩০-০, মুজিব ৪-০-২৮-২, রশিদ ৪-০-১৯-০, ওমরজাই ৩-০-১৭-২)।
ফল : ৬ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।