প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়
চেম্বার ডেস্ক:: ২০১৯ সালের ওয়ানডে এবং গত বছরের নভেম্বরে পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। সবশেষ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দাপুটে জয় পেল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম খেলায় ১২ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা। এই জয়ে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান করে ইংল্যান্ড। দলের হয়ে ৪২ বলে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন অধিনায়ক জস বাটলার।
১৫৭ রানের টার্গেট তাড়ায় নাজমুল হোসেন শান্তর ৩০ বলের ৫১ আর সাকিব আল হাসানের ২৪ বলের ৩৪ রানের অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে ৬ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ।
এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে ইংলিশরা। ফিল সল্টকে সঙ্গে নিয়ে ১০ ওভারে ৮০ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক বাটলার।
এরপর মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ড হারায় ২ উইকেট। নাসুম আহমেদের বলে ফিল সল্টকে কট বিহাইন্ড দিয়েছিলেন আম্পায়ার মাসুদুর রহমান, সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন ইংলিশ ওপেনার। তবে আল্ট্রা-এজে দেখা যায় বল ব্যাটের নিচের দিকে লেগেছে বল। নাসুম আহমেদের শিকার হয়ে ৩৫ বলে ৩৮ রানে ফেরেন ফিল সল্ট।
এরপর মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে সাকিব আল হাসানের বলে লং অনে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয় দলীয় ৮৮ রানে ফেরেন ডেভিড মালান।
১৫.৬ ওভারে দলীয় ১৩৫ রানে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে বোল্ড হন বেন ডাকেট। ১৩ বলে ২০ রান করেন তিনি। তার বিদায়ে ইংল্যান্ড হারায় তৃতীয় উইকেট।
১৯ রানেই সাজঘরে ফেরার কথা ছিল ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারের। নাসুম আহমেদের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দেন তিনি। কিন্তু ফিল্ডার সাাকিব রাখতে পারেননি বাটলারের ক্যাচটি। সাকিবের হাত ফসকে বলটি মাটিতে পড়ে যায়।
নাসুমের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাকিবের কল্যাণে নতুন জীবন পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক। ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬.১ ওভারে দলীয় ১৩৫ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।তার আগে ৪২ বলে চার বাউন্ডারি আর চারটি ছক্কার সাহায্যে করেন দলীয় সর্বোচ্চ ৬৭ রান।
হাসান মাহমুদের বলে লং অনের পরও দিয়ে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। সেখানে ফিল্ডিং করা নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পরেন তিনি।
১৮.৫ ওভারে হাসান মাহমুদের বলে লং অনে ক্যাচ তুলে দেন স্যাম কারেন। ১৪৬ রানে ইংল্যান্ড হারায় পঞ্চম উইকেট। ১৪৭ রানে ক্রিস ওকসকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তাসকিন আহমেদ। শেষ দিকে একের পর এক উইকেট হারানোয় ইনিংসের শুরুতে বড় স্কোর গড়ার পথে থাকা ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৬ রানে থামে।
১৫৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। লিটন দাসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ৩.৩ ওভারে ৩৩ রানের জুটি গড়েন রনি তালুকদার।
২০১৫ সালের পর জাতীয় দলে ফেরা রনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ শুরু করেছিলেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ভালো শুরুর পরও নিজের ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি তিনি।
ইংলিশ তারকা লেগ স্পিনার আদিল রশিদের গুগলিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ১৪ বলে চার বাউন্ডারিতে রনি করেন ২১ রান। তার বিদায়ে ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
রনি আউট হওয়ার পর মাত্র ১১ রানের ব্যবধানে ফেরেন আরেক ওপেনার লিটন দাসও। তিনি জোফরা আর্চারের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্রিস ওকসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। ৪.৫ ওভারে দলীয় ৪৩ রানে সাজঘরে ফেরার আগে লিটন করেন ১০ বলে ১২ রান।
তৃতীয় উইকেটে অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে ৩৯ বলে ৬৫ রানরে জুটি গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১১.২ ওভারে দলীয় ১০৮ রানে মঈন আলীর বলে স্যাম কারেনের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তৌহিদ হৃদয়। অভিষেক ম্যাচে তিনি করেন ১৭ বলে দুই চার আর এক ছক্কায় ২৪ রান। তার বিদায়ে ভাঙ্গে জুটি।
হৃদয় আউট হওয়ার পরের ওভারেই আউট হন দুর্দান্ত খেলে যাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। ফিফটি তুলে নেওয়ার পর বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি।
৩০ বলে ৮ বাউন্ডারির সাহায্যে ৫১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে মার্ক উডের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। তার বিদায়ে ১২.২ ওভারে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর আফিফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি ২৪ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১৩ বলে ১৫ রান করেন আফিফ হোসেন।