এমসি কলেজে চলছে ছাত্রলীগের দুই নেতার দাপট

সাইফুল আলম:  কোনো কিছুতেই থামছে না ছাত্রলীগ। একের পর এক অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগ । সকল প্রকার আইনের ঊর্দ্ধে উঠে অপকর্ম গুলো তারা করে বেড়াচ্ছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি,ভর্তি বাণিজ্য,রাহাজানি, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসা,ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া, এমন কি জাতি গড়ার কারিগড় জাতির বিবেক শিক্ষরা পযর্ন্ত বাদ পড়েনি তাদের নগ্ন থাবা থেকে। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক লাঞ্ছিত করা তাদের রুটিন ওয়ার্কে পরিনত হয়েছে। এক কথায় যত খারাপ কাজ আছে সব কিছু করা তাদের দায়িত্বে পরিনত হয়েছে।
সিলেটের দুই শীর্ষ নেতা রনজিত সরকার ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের ছত্রছায়ায় এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর ও মানিকের দাপটে এসব অপকর্ম চলছে। ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করতে পারছেন না। ছাত্রলীগের এ দুই নেতার দাপটে পুরো এমসি কলেজ ক্যাম্পাস সব সময় থাকে আতংকিত। নীচে তাদের কিছু ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো।

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি:
ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর ও মানিকের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সরাসরি মদদ দিচ্ছেন। কেউ কেউ এজেন্ট নিয়োগ করে বখরা নিচ্ছেন। এমনকি মধ্যম ও নিচের সারির নেতারা যে টু-পাইস কামান তাতেও শীর্ষ নেতারা ভাগ বসাচ্ছেন। এ নিয়ে একাধিকবার দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে। ক্যাম্পাসে ঠিকাদারি ও বিভিন্ন এলাকার চাঁদা আদায় নিয়ে নিজেরা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ গত ১ নভেম্বর সিলেট কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট জুবায়ের আহমদের গাড়ি এমসি কলেজের মাঠে আটকে রেখে চাঁদা দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর ও মানিক।
পরে ওই আইনজীবী গাড়ি উদ্ধারের জন্য শাহপরান থানায় ফোন করলে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে পরামর্শ দেয়া হয়, স্থানীয় কাউন্সিলর আওয়ামীলীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
একইভাবে গত ৫ নভেম্বর রাতে এমসি কলেজ অধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে ছিনতাই করতে গিয়ে ছাত্রাবাসের ছাত্রদের হাতে ধোলাই খায় কয়েক ছিনতাইকারী। কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ও মানিকের প্রশ্রয়ে ছিনতাইকারীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে আর এসব অপকর্ম ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
আর এ সকল অপকর্মের মূল হোতা সিলেটের দুই শীর্ষ আওয়ামীলীগ নেতা রনজিত সরকার ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ।

ভর্তি বাণিজ্য:
টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে যোগ হয়েছে ছাত্রলীগ নেতাদের ভর্তি-বাণিজ্য। এমসি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি নিয়ে ছাত্রলীগের অবৈধ বাণিজ্যে বিব্রত প্রশাসন। ছাত্রলীগের চাপে টিকতে না পেরে দু-দিন কলেজের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেছিল কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, এমসি কলেজে ২০০টি আসনে অবৈধভাবে ভর্তির আবদার করছেন ছাত্রলীগের নেতারা। এর মাধ্যমে এরই মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

সিট বাণিজ্য:
ভর্তির পর ছাত্র-ছাত্রীদের হলে তুলতে ‘সিট বাণিজ্য’ করে ছাত্রলীগ। প্রতিটি সিটে একজন তোলার বিনিময়ে কমপক্ষে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। এবার এমসি কলেজে অর্থের বিনিময়ে প্রায় ৫০ ছাত্রীকে সিটে তোলা হয়েছে।
এখানে ভর্তিবাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। শুধু এখানেই বা কেন, এই ভর্তিবাণিজ্য পরিব্যাপ্ত হয়েছে প্রায় সকল কলেজে। ছাত্রলীগ নেতাদের পয়সা না দিয়ে কারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আর ভর্তি হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ইভিটিজিং:
এমসি কলেজের এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৪ জন ছাত্রলীগ কর্মী গুরতর আহত হয়েছেন এবং দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আহতদের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর সকালে এমসি কলেজ টিলাগড় সড়কে কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ইভটিজিং এর ঘটনায় এমসি কলেজ ছাত্রলীগের এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে ধাওয়া দেয়। এতে ৪ জন আহত হন।

অন্যদিকে, কলেজের বাংলা বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীকে ইভটিজিং করেন সোলেমান চৌধুরী নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি এমসি কলেজ ছাত্রলীগের উপ মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রলীগ নেতা সাইফুরের সমর্থক বলে জানা গেছে। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় পরে ওই ছাত্রীকে জিম্মি করে তিন হাজার টাকা হাতিয়ে নেন সোলেমান।
৬ নভেম্বর দুপুরে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিতে তিনি কলেজে গিয়েছিলেন।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, গত সোমবার এমসি কলেজে ফাইনাল পরীক্ষা শেষে কলেজ মাঠে বসেছিলাম। সোলেমান অকারণেই আমাকে উত্ত্যক্ত করেন। বাজে ভাষায় টিজ করতে থাকেন, একাধিকবার প্রেমের প্রস্তাব দেন। হাত ও মুখ দিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকেন৷ এ ঘটনায় কলেজ অধ্যক্ষের কাছে আমি অভিযোগ দিয়েছি।

শিক্ষক লাঞ্চনা
এমসি কলেজ আন্তবিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির সময় ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দু্ল বাসিতকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। গত৮ নভেম্বর বেলা ১১টায় খেলার মাঠে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) বনাম ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের খেলা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মানিক। তিনি আইবিএ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আব্দুল বাসিত অধ্যক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ প্রশাসন। লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া এক সপ্তাহের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

এভাবে একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য অস্ত্ররও মহড়া, বিরোধী মতের কেউ হলে তাকে অপদস্থ, নাজেহাল করাসহ সকল অন্যায় কাজ তারা দেদারসে করে যাচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে।