কুলাউড়ায় মৃত ব্যক্তির শেষযাত্রায় স্বজন হয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে তাঁরা

ইউসুফ আহমদ ইমন, কুলাউড়া :: মহামারি করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনে স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছে কুলাউড়ার মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত একদল যুবক। করোনায় কারো মৃত্যু হলে অনেক পরিবার সদস্য বা স্বজনেরা মৃতদেহ দাফন করতে এগিয়ে আসে না। সেখানে করোনার শুরু থেকে উপজেলার ২০ সদস্যের একটি টিম নিরলস ও নিস্বার্থভাবে এ কাজ করে যাচ্ছেন।

 

এ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলার ৩টি উপজেলায় সর্বশেষ রবিবার (২ আগস্ট) জুড়ী উপজেলার একজন নারীসহ মোট ৯জনের লাশ দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে মানবতার ফেরিওয়লা এ যুবকরা। শুধু করোনা নয়, যদি কোনো ব্যক্তির দাফনের কাজ সম্পন্ন করতে আর্থিক সমস্যা হয় তার দায়িত্বও নেন তারা। এমনকি দূর থেকে মৃতদেহ আনতে যদি কোনো সমস্যা হয় তাদেরও অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। তাদের এ কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বা এর লক্ষণ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের শেষ বিদায় জানাতেও যেতে পারছেন না প্রিয়জনরা ও স্বজনেরা। আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ ফেলে রেখে যাওয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে দেশে। এমন প্রেক্ষাপটে মৃত ব্যক্তির শেষযাত্রার দাফনের কাজটি করে যাচ্ছে এ-টিমের সদস্যরা।

 

জানা যায়, ১২ এপ্রিল থেকে ভয়াবহ করোনা মহামারীতে অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য স্ব-প্রনোদিত হয়ে কুলাউড়া উপজেলার সাহসী যুবকেরা মৃতদের লাশ দাফনের জন্য মহতী পদক্ষেপ গ্রহন করে। জেলার কুলাউড়া উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী যে কোন এলাকায় করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে কেও মারা গেলে তাদের দাফন-কাফনের জন্য কুলাউড়া শহরের উত্তরবাজারের প্রমীজ ষ্টীলের স্বত্বাধিকারী সমাজসেবক মোঃ ইকবাল হোসেন সুমনের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের ‘কোভিড-১৯ লাশ দাফন কমিটি’ গঠন করা হয়।

 

এ-টিমের শুরু থেকে নেতৃত্বে দিচ্ছেন ইকবাল হোসেন সুমন তিনি প্রতিবেদক কে বলেন, পরিবারের সদস্যরা ভয় পেলেও লাশ সৎকারে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের নির্দেশনা মেনে নিজেরা সুরক্ষিত থেকে লাশ সৎকার করছেন এবং এখন পর্যন্ত তাঁদের কোনো সদস্য করোনাভাইরাসে পর্যন্ত আক্রান্ত হননি এবং সবাই নিজ ইচ্ছাতে এ-কাজ করতে আগ্রহী হয়েছেন।

 

কোভিড-১৯ লাশ দাফন টিমের সদস্যরা হলেন- টিম লিডার মোঃ ইকবাল হোসেন সুমন, মোঃ মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী খোকন, আতাউর রহমান আতা, রেজাউল আম্বিয়া রাজু, সুহেল চৌধুরী সুইট, হাফিজ ইকবাল হুসেন, অলিউর রহমান, হাফিজ আব্দুল কাইয়ুম, ফাহিম ইকবাল চেšধুরী, মোস্তফা কামাল, কামাল হুসেন, মোঃ মহি উদ্দীন শিপু, গিলমান আহমদ, হাসান আহমদ, আব্দুর রশিদ, আব্দুল জব্বার, আব্দুল মতিন। এছাড়াও নারী সদস্যরা দুজন হলেন, তাহমিনা ফেরদৌস ও সুমাইয়া হুসাইন রিমা।

 

কুলাউড়াসহ পার্শ্ববর্তী কোন এলাকার মানুষ করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ফোন (০১৭১১৩৬৬১৩৩) পাওয়া মাত্র দাফন টিম তার গোসল থেকে শুরু করে দাফন কাফনের জন্য ঐ ব্যক্তির বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে মৃত ব্যক্তির সকল কাজ সু-সম্পন্ন করবে। তাদের এ উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।