সর্বশেষ

» আসুন আমরা সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই।। আব্দুল হালিম

প্রকাশিত: ২৯. ডিসেম্বর. ২০২২ | বৃহস্পতিবার

আব্দুল হালিম:: 
সমাজের সচ্ছল মানুষের ঘরে বছর পরিক্রমায় শীত ঋতু হিসাবে আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে এলেও দেশের বৃহত্তর জনজীবনে শীত, নৈরাশ্য ও বেদনার ধূসর বার্তাবাহক মাত্র। হাড় কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবনে শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাঁচার জন্য অসহায় দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন অনেক শীতবস্ত্রের।

শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে হলেও প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্য এবং শীত মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে কার্যকর উদ্যোগ। বিশেষ করে শিশুরা গণহারে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের সুচিকিৎসার ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে শীতে দুর্ভোগ যেমন বাড়বে, তেমনি শীতজনিত মৃত্যুর হারও বাড়বে।
তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ, দলমত-নির্বিশেষে সমাজের ধনাঢ্য ও বিত্তবান ব্যক্তিদের শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। নবি করিম (সা.) মানুষকে অন্ন ও বস্ত্রদানের পরকালীন পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা বলেছেন, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন।

ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন।’ (আবু দাউদ)।

শীতবস্ত্র ও গরম কাপড়ের অভাবে যে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে শীতার্ত ব্যক্তিদের দিন কাটছে এ অবস্থার শিগ্গির অবসান ঘটাতে হবে। শীতের প্রভাবে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যারা শীতজনিত রোগব্যাধিতে ভুগছে, তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধপথ্য ও সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা একান্ত প্রয়োজন।

যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাদের দুরবস্থা যে সর্বাধিক, সে কথা বলাইবাহুল্য। বিত্তবান মানুষ শীতবস্ত্র ব্যবহার করে পরিত্রাণ পেলেও দরিদ্র লোকেরা শীতবস্ত্রের অভাবে সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। হাড় কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে-অনাহারে ও অর্ধাহারে দিন যাপন করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।

নবি করিম (সা.) অসহায় মানুষকে সাহায্যের কথা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুসিবতগুলো দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করবেন, যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’ (মুসলিম)।

ক্রয়ক্ষমতার বাইরে শীতার্ত ব্যক্তিরা না পারে পেট ভরে খাবার খেতে, না পারে কোনো অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে। রাতের বেলায় দেখা যায় কীভাবে, কেমন করে শীতবস্ত্রবিহীন মানুষ কষ্টে রাত যাপন করছে। তাদের নেই কোনো শীত নিবারণ করার সম্বল। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতের তীব্রতায় দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, গরিব, দুঃখী, বস্ত্রাভাবী শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নিদারুণ কষ্ট পায়।

তাই সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিরা যদি ইচ্ছা করেন, তাদের নিজ নিজ জেলার শীতার্ত অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে পারেন।

হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ায় মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন (রোজ কিয়ামতের দিন) তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে, যে মানুষকে বস্ত্রদান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে।’

সুতরাং প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মানুষের পারস্পরিক মানবতাবোধ ও উদার মানসিকতা থাকা অপরিহার্য। একজন মানুষ বিপদে পড়লে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অসহায় হলে তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করা সমাজের বিত্তবান প্রতিবেশীর ইমানি দায়িত্ব ও মানবিক কর্তব্য।

সব মানুষের উচিত সমগ্র সৃষ্টির প্রতি দয়া-মায়া, অকৃত্রিম ভালোবাসা, সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও সহানুভূতি বজায় রাখা। শীতার্ত গরিব-দুঃখী মানুষের সামান্য উঞ্চতার ব্যবস্থা করে দিলে আল্লাহতায়ালা অবশ্যই এর উপযুক্ত বদলা দেবেন। কারণ বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন। শীতের তীব্রতা খুব বেশি বেড়ে গেলে কিংবা টানা শৈত্যপ্রবাহ থাকলে আমরা শীতবস্ত্র বিতরণের প্রয়োজন অনুভব করি। দান করার ইচ্ছা থাকলে শীতের শুরুতেই অসহায়দের শীত উপকরণ পৌঁছে দেওয়া উচিত। এতে শীতার্তদের কষ্ট লাঘব হয়। তা ছাড়া হাদিসে যথাসময়ে দ্রুত দান করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক সাহাবি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কোন দানে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়? তিনি বলেন, সুস্থ ও কৃপণ অবস্থায় তোমার দান করা, যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। দান করতে এ পর্যন্ত বিলম্ব করবে না, যখন প্রাণবায়ু কণ্ঠাগত হবে, আর তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪১৯)। আল্লাহ আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30