কানাইঘাটে স্ত্রীকে তালাক দেয়ায় প্রবাসীর বাড়িতে হামলা ॥ আটক ৬

কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ সিলেটের কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের নিজ চাউরা উত্তর গ্রামের মৃত তফজ্জুল আলীর পুত্র কুয়েত ফেরত জামাল উদ্দিনের বসত বাড়িতে অর্তকিত ভাবে ঢুকে পড়ে শশুড়বাড়ির লোকজন কর্তৃক প্রবাসীকে বেধড়ক মারধর ও ঘরের মালামাল ভাংচুর সহ নগদ টাকা, স্বর্ণলংকার লুটের অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।
একপর্যায়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর কবল থেকে প্রবাসী জামাল উদ্দিনের (৬০) উপর হামলাকারী তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মারিয়া বেগম, দুই শ্যালিকা ও শ্যালক মছরু সহ ৬ জনকে আটক করে সন্ধ্যার দিকে থানায় নিয়ে আসেন।
আহত জামাল উদ্দিনের বোন মায়া বেগম, রেজিয়া বেগম, আলফাতুন বেগম ও ভাই ফারুক আহমদ সহ প্রতিবেশীরা জানান, প্রবাসী জামাল উদ্দিন কুয়েতে থাকা অবস্থায় স্ত্রী মারিয়া বেগমের অনৈতিক সর্ম্পকের কারনে প্রায় ৫ বছর পূর্বে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তালাক প্রদান করেন। তালাক দেওয়ার পর স্ত্রী মারিয়া বেগম তার বাবার বাড়িতে কালিনগর গ্রামে চলে যান। সেখানে ৭ মাস থাকার পর পুণরায় বিবাহিত মেয়ে শিল্পী বেগমের সহযোগিতায় তালাকপ্রাপ্ত স্বামীর বাড়িতে এসে জোরপূর্বক অবস্থান করে। অনুমানিক দুই মাস পূর্বে জামাল উদ্দিন কুয়েত থেকে একেবারে দেশে চলে আসার সপ্তাহদিন পূর্বে মারিয়া বেগম ফের বাবার বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে আসার পর থেকে জামাল উদ্দিনকে তার শশুড়বাড়ির লোকজন নানাভাবে হুমকি প্রদান সহ মারিয়া বেগমকে তালাক দেওয়া নিয়ে আপত্তি তুলে আসছিল বলে জামাল উদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা জানান।
এরপর গত ২৭ অক্টোবর আদালতের মাধ্যমে জামাল উদ্দিন স্ত্রী মারিয়া বেগমকে তালাক প্রদান করেন। আদালতের মাধ্যমে তালাক নামাটি পেয়ে জামাল উদ্দিনের প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তার শশুড়বাড়ির লোকজন ও মেয়ের জামাই। তালাক প্রদানের জের ধরে আজ শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মারিয়া বেগম তার দুই বোন, দুই ভাই সহ ১৫/২০জন লোক অট্রোরিক্সা (সিএনজি) ও মোটরসাইকেল যোগে প্রবাসী জামাল উদ্দিনের পাকা বাড়িতে হানা দেয়। তারা বসত ঘরে প্রবেশ করে কেসি গেইট লাগিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে জামাল উদ্দিনকে বেদড়ক মারপিট শুরু করে এবং জামাল উদ্দিনের প্রবাস থেকে নিয়ে আসা দিনার সহ নগদ ১০ লক্ষ টাকা, কয়েক ভরি স্বর্ণালংকার, জমির দলিলপত্র হামলাকারীরা নিজের আয়ত্তে নিয়ে যায়। জামাল উদ্দিনের আত্ম চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসেন। কিন্তু প্রতিবেশী লোকজন কেসি গেইট তালা বদ্ধ থাকায় ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এ সময় জামাল উদ্দিনের আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে বসত ঘরের পিছনের দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে হামলাকারীদের হাতে ৫/৬জন আহত হন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী কয়েকজনকে আটকে রাখেন। বাকিরা মোটর সাইকেল ও সিএনজি যোগে পালিয়ে যায়। পরে কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জামাল উদ্দিনের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মারিয়া বেগম, তার দুই বোন ও দুই ভাই সহ ৬জনকে গ্রামের লোকজনের কবল থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এদিকে গুরুতর আহত জামাল উদ্দিনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
থানার এসআই পিযুষ সিংহ জানান, প্রবাস ফেরত জামাল উদ্দিনের বাড়ি থেকে বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসীর হাত থেকে নারী পুরুষ সহ ৬জন উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। স্ত্রী মারিয়া বেগমকে তালাক দেওয়া নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেলে আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় জামাল উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য জামাল উদ্দিনের কোন পুত্র সন্তান নেই। একমাত্র বিবাহিত কন্যা শিল্পী বেগম ৩ সন্তান নিয়ে পিত্রালয়ে বসবাস করে।