ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন ঋষি সুনাক
চেম্বার ডেস্ক:: যুক্তরাজ্যের ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করলেন কনজারভেটিভ নেতা ঋষি সুনাক।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে গত ২০০ বছরের ইতিহাসে ব্রিটেনের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিক।
এর আগে, বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন।
ব্রিটিশ রাজা চার্লস কনজারভেটিভ এই নেতাকে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে সরকার গঠনের প্রস্তাব পান ঋষি। বাকিংহাম প্যালেসের ১৮৪৪ কক্ষে রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে ঋষি সুনাকের বৈঠক হয়।
শুল্ক হ্রাসের পরিকল্পনা ঘিরে তৈরি হওয়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া লিজ ট্রাসের স্থলাভিষিক্ত হলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি।
ব্রিটেনের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ট্রাস। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৩টা) ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বিদায়ী ভাষণ দেন লিজ ট্রাস। তার আগে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে বিদায়ী বৈঠক করেন তিনি।
৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে। তার বাবা যশবীর সুনাক জন্মগ্রহণ করেন কেনিয়ায়। তার মা ঊষা সুনাক জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন তাঙ্গানিকায়, যা বর্তমানে তানজানিয়ার অংশ।
ঋষির দাদা-দাদি অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৯৬০ এর দশকে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। যশবীর সুনাক যুক্তরাজ্যে একজন জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) হিসেবে ও ঊষা সুনাক ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ঋষি সুনাকই সবার বড়।
যুক্তরাজ্যের রমসি, হ্যাম্পশায়ারের স্ট্রউড স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি। পরে উইনচেস্টার কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেন। অক্সফোর্ডের লিঙ্কন কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ঋষি। ২০০১ সালে তিনি প্রথম স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে এমবিএ করেন।
ঋষি সুনাক ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি ও ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তির জামাতা। নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতার সঙ্গে তার পরিচয় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই প্রণয় ও পরে বিয়ে।
২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ঋষি সুনাক। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ঋষি।
তবে বাজেট বিতর্কের জেরে গত ৫ জুলাই পদত্যাগ করেন তিনি। তার পদত্যাগে বরিস জনসন সরকারের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। যার জেরে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এরপর বরিসের উত্তরসূরী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নাম লেখান ঋষি। তবে শেষপর্যন্ত লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান তিনি। কিন্তু এবার আর ঋষির পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস জনসন ও পেনি মর্ডান্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলেন এশীয় বংশোদ্ভূত এ নেতা।