ফর্মুলা চুরির অভিযোগ, ফাইজারের বিরুদ্ধে মডার্নার মামলা
চেম্বার ডেস্ক:: করোনার টিকা নিয়ে পেটেন্ট লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ফাইজার-বায়োএনটেক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি মডার্না। কোম্পানিটির দাবি, করোনার টিকা তৈরিতে মডার্নার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ‘কপি’ করেছে ফাইজার-বায়োএনটেক। মহামারির কয়েক বছর আগে মডার্না ওই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিল।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মডার্না কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মার্কিন কোম্পানি মডার্না ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের একটি জেলা আদালত ও জার্মানির ডুসেলডর্ফের একটি আঞ্চলিক আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেছে মডার্না কর্তৃপক্ষ। দুই মামলাতেই টিকার মূল উপাদান এমআরএনএ প্রযুক্তি চুরির অভিযোগ এনেছে মডার্না।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থঅ ফুহ অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) করোনা টিকার অনুমোদন দিয়েছিল, সেটি ছিল ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এফডিএর অনুমোদন পায় ফাইজার-বায়োএনটেক; তার এক সপ্তাহ পরেই অনুমোদন পায় মডার্নার টিকা।
ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না— এ দু’টি টিকাই সর্বাধুনিক ম্যাসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) প্রযুক্তিতে তৈরি। এই প্রযুক্তিতে টিকা প্রস্তুতে মৃত বা বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত জীবাণু ব্যবহার করা হয়না। বরং ব্যবহার করা হয় এক ধরণের প্রোটিন, যা দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর কোনো নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে মানবদেহের সহজাত প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বহুগুণ শক্তিশালী করে।
মডার্নার দাবি, এই প্রযুক্তি প্রথম আবিষ্কার করেছিল তাদের কোম্পানির বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে পেটেন্টও মডার্নার রয়েছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ— পেটেন্টের ব্যাপারটি জানা থাকা সত্ত্বেও মডর্না কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে এমআরএনএ প্রযুক্তি সংগ্রহ ও তা ব্যবহার করে টিকা তৈরি ও বাজারজাত করেছে ফাইজার-বায়োএনটেক।
শুক্রবারের বিবৃতিতে মডার্নার কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকেই এমআরএনএ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন মডার্নার গবেষকরা। ওই সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্বাসতন্ত্রের রোগ মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (মের্স) প্রদুর্ভাব ঘটেছিল, এই রোগ ও তার জীবাণু সম্পর্কে গবেষণাসূত্রেই এমআরএনএ প্রযুক্তির ধারণা প্রথম আসে মডার্নার গবেষকদের মধ্যে। তারপর এই প্রযুক্তিতে একটি টিকা প্রস্তুত করে ২০১৫ সালে স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর ট্রায়ালও পরিচালনা করে মডার্না। তার ৫ বছর পর, ২০১৫ সালে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি টিকাও প্রস্তুত করে ফেলে কোম্পানি।
তারপর ২০১৬ সালে আবেদন করে এমআরএনএ প্রযুক্তির স্বত্ত্ব বা পেটেন্ট পায় মডার্না।
শুক্রবার যে মামলা করেছে মডর্না কর্তৃপক্ষ, সেখানে ফাইজার-বায়োএনটেকের বিরুদ্ধে এমআরএনএ প্রযুক্তি চুরির অভিযোগ করা হয়েছে, পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিবৃতিতে মডার্নার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের এই মামলা করার কারণ— সর্বাধুনিক ও খুবই কার্যকর এমআরএনএ প্রযুক্তি আবিষ্কারের কৃতত্ব আমাদের। কোম্পানির কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে এই প্রযুক্তি আবিষ্কার বিষয়ক গবেষণায়। করোনা মহামারির আগেই আমরা এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলাম।’
‘ফাইজার-বায়োএনটেক আমাদেরকে না জানিয়ে এই প্রযুক্তি কোনোভাবে যোগাড় করেছে এবং মডার্না কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন না নিয়ে টিকা প্রস্তুত করে তা বাজারজাত করছে। এটা পরিষ্কারভাবেই বেআইনী কাজ।’
‘আমরা আরও অনেক আগেই এই মামলা করতে পারতাম, কিন্তু মহামারির তীব্রতার কারণে সে সময় আইনী ব্যবস্থা নেয়নি কোম্পানি।’
মামলার অভিযোগে মডার্নার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘গত দুই বছরের ক্ষয়ক্ষতি আমরা হিসেবে ধরছি না। কিন্তু ২০২২ সালের ৮ মার্চ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফাইজার-বায়োএনটেকের কারণে আমাদের যে আর্থিক লোকসান হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’
চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনা টিকা বিক্রি করে ফাইজার-বায়োএনটেক আয় করেছে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার এবং মডার্না আয় করেছে ১০ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে ফাইজার জানিয়েছে, তারা এখনো মামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না এবং এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে পারছে না।