বড়লেখায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতের দাফন সম্পন্ন: থানায় মামলা
বড়লেখা প্রতিনিধি: বড়লেখা উপজেলার ১০নং দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণভাগ বাজারে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত তারেক আহমদ (২৫) এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তারেকের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ আসর পূর্বহাতলিয়া জামে মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ ময়দানে জানাযা শেষে পঞ্চয়েতী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এদিকে রাত ৮টায় নিহতের পিতা রফিক উদ্দিন বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৭ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বড়লেখা থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিকেলে স্থানীয় দক্ষিণভাগ বাজারে দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের সমর্থকরা এক বিজয় মিছিল বের করে। মিছিল থেকে নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমানের ২ সমর্থকের দোকানে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়ে। এতে ব্যবসায়ীদের সাথে আজির উদ্দিনের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১০/১৫ জন আহত হয়। এরমধ্যে আজির উদ্দিন সমর্থক পূর্বহাতলিয়া গ্রামের রফিক উদ্দিনের পুত্র তারেক আহমদ (২৫) মারা যায়
এই ঘটনায় নিহতের পিতা রফিক উদ্দিন নিজে বাদী হয়ে আজ মঙ্গলবার রাতে বড়লেখা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩২, তারিখ: ৩০/১১/২০২১ইং। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ও ৭ জনকে আসামী করা হয়। সকল আসামী সাইদুর রহমানের সমর্থক ও বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
মামলার আসামীর হলেন: ১। পূর্বহাতলিয়া গ্রামের আব্দুল মতিনের পুত্র মিজান আহমদ(২৫), ২। জুতির বন্দ গ্রামের কটাই মিয়ার পুত্র সুমন আহমদ(২৬), ৩। পূর্বহাতলিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র কাওছার আহমদ(৩০), ৪। কাশেন নগর গ্রামের জহুর উদ্দিনের পুত্র রেদুয়ান আহমদ(৩৩), ৫। পূর্বহাতলিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র ফয়ছল আহমদ(৩৫), ৬। একই গ্রামের জুনাব আলীর পুত্র সোহেল মিয়া(৩৫), ৭। একই গ্রামের আহমদ আলীর পুত্র সাকির হোসেন(২৭), ৮। সফরপুর গ্রামের নুর মিয়ার পুত্র মিসবাহ উদ্দিন(৩৫), ৯। একই গ্রামের নুর উদ্দিনের পুত্র জিয়া উদ্দিন(২৫) ও ১০। পূর্বহাতলিয়া গ্রামের মাহমদ আলীর পুত্র গুলজার(২৩)।
বড়লেখা থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, তারেক নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ আসামীদের গ্রেফতারে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে। শীঘ্রই সব আসামীকে গ্রেফতার করা হবে। এব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবেনা।
এদিকে তার সমর্থকদের আসামী করার নিন্দা জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ভোট কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন তার ভোটচুরির ঘটনা আড়াল করতে হত্যা ও মিথ্যা মামলার রাজনীতি করে শান্ত জনপদকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র করছেন। কোন কারণ ছাড়াই আমার সমর্থকদের দোকানপাটে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আজির উদ্দিন সমর্থকদের হামলার কারণে দোকানপাট ছেড়ে সকলে আত্মরক্ষায় ছুটে যায়। এই সময়ে আমার নেতাকর্মীরা কারো উপরে হামলার সুযোগ নেই। উল্টো তারা আহত হয়ে বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আমি এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি। প্রকৃত আসামীদের খুঁেজ বের করার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন, আমার বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই সাইদুর রহমানের ইন্ধনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নির্বাচনে তার ব্যাপক ভরাডুবি আড়াল করতেই সাইদুর রহমান হত্যার রাজনীতি শুরু করেছেন। তারেক হত্যার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। আইনীভাবে আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।