নির্মাণকাজ শেষে ঠিকাদারের কাছ থেকে পদ্মা সেতু বুঝে পেল কর্তৃপক্ষ
চেম্বার ডেস্ক:: স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর বাকি মাত্র দুদিন। পদ্মার দুপাড় থেকে শুরু করে সারাদেশে সেতুকে ঘিরে উচ্ছ্বাস। এরই মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ঠিকাদার তার কাজ শেষ করে সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে যে কোনো অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ছোটখাটো কাজ থাকবে। আগামী একবছর ধরে তারা সে কাজ ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ করবে।
তিনি বলেন, শতভাগ কাজ শেষ করে ঠিকাদার কোম্পানি সেতুটি বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে এরপরও এক বছর তারা ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ এর কাজ করবে।
এরআগে, শুক্রবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় পরীক্ষামূলকভাবে টোল দিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কয়েকটি গাড়ি পার হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মাওয়া প্রান্তের টোলপ্লাজায় টোল দিয়ে সেতু প্রকল্পের গাড়িগুলো পদ্মা সেতু পার হয়। তবে দেশের পরিবহনগুলোতে প্রযুক্তির বভ্যহার না থাকায় সনাতন পদ্ধতিতে টোল দিয়েই সেতু পার হতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, গত মঙ্গলবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেওয়া বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে এই প্রথম সেতুর উভয়প্রান্তে সবগুলো ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হয়েছে। এর আগে কয়েকটি ধাপে পরীক্ষামূলকভাবে জেনারেটরের মাধ্যমে বাতিগুলো জ্বালানো হয়েছিল।
এদিকে দেশের সামর্থ্য ও সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত এই সেতু শনিবার (২৫ জুন) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানের দিন সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এসে উপস্থিত হবেন। মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন ও সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন তিনি। পরবর্তীতে সেখান থেকে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুর অংশে দলীয় একটি জনসভায় অংশ নেবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতিও শেষের দিকে। বিদেশি কুটনীতিকসহ দেশ বরেণ্য সুধীজনরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশের দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ তৈরিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ শেষ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এদিকে শুক্রবার (২৪ জুন) সকাল থেকে রবিবার (২৬ জুন) পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত সড়ক ও মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান এবং ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ ও পুলিশ। ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপপুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন এক ক্ষুদে বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, শনিবার (২৫ জুন) পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ২৪ জুন সকাল হতে ২৬ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান এবং ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। এ জন্য ঢাকা মহানগরী এলাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়াগামী কাভার্ডভ্যান এবং ট্রাকসমূহকে আগামী ২৪ জুন সকাল হতে ২৬ জুন সকাল পর্যন্ত পাটুরিয়া দৌলতদিয়া এবং চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে ফেরিতে চলাচলের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ মুন্সিগঞ্জের পদ্মাপাড়ে। উদ্বোধন ও সমাবেশ হবে মাওয়ায়। তাই প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। পদ্মা সেতু উত্তর থানা সংলগ্ন অনুষ্ঠান স্থল ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে চলছে সাজসজ্জা। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু ২৫ জুন সকালে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ২৬ জুন ভোরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বহুল প্রত্যাশিত এই মেগাস্ট্রাকচার।