‘আর কত প্রাণহানী হলে আওয়ামী লীগ সিলেটের পরিস্থিতি ভয়াবহ বলবে?’ : সিলেট বিএনপি
চেম্বার ডেস্ক:: সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেছেন, সিলেটের বন্যার প্রকৃত পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে না। সিলেটে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির যে হিসাব সরকারী ভাবে দেয়া হয়েছে বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক ভিন্ন। বাস্তবে সিলেটের অবস্থা আরো ভয়াবহ। আর কত প্রাণহানী হলে আওয়ামী লীগ সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ বলবে ?
সিলেট জেলায় শতাব্দীর এই ভয়াবহ বন্যার চলমান রয়েছে। সিলেটের মানুষ অসহায় হয়ে চরম দুর্ভোগের মাঝে সময় পার করছে। এই সময়ে প্রতিদিনের মত আজও আমাদের জেলার কোন না কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানবাসী মানুষদের পাশে থাকার কথা ছিল, এখানে আসার আগেও আমরা ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীতে ছিলাম, এই সংবাদ সম্মেলনের পরও আমরা ছুটে চলব বন্যার্থদের পাশে। তার পরও এই কঠিন সময়ে অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আপনাদের সামনে আসতে হলো। সিলেটের মানুষ যখন অসহায় হয়ে নিরব কান্না করছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পানি ডিঙ্গিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি বন্যায় বিএনপির কর্মতৎপরতা নিয়ে ঠাট্টা করছেন।
বুধবার (২২ জুন) দুপুরে সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন গতকাল প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের এক নেতা সাংবাদিকদের উপর ক্ষোভ ঝেড়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছেন- ‘সাংবাদিকরা বন্যার যে ভয়াবহতা প্রচার করেছেন সিলেটে নাকি তার কিছুই হয় নি’। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে তারা এখন সাংবাদিকদের উপরও ক্ষেপেছেন। কারণ সাংবাদিকরা সিলেটের প্রকৃত অবস্থা গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। আওয়ামীলীগ এখন স্বাধীন সাংবাদিকতায়ও হস্তক্ষেপ করতে চায়। তারা সংবাদপত্র ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করেছেন এই অঞ্চলে চলতি বন্যায় এপর্যন্ত পানিতে ডুবে এবং পাহাড় ধসে ২৩ জনের প্রাণহানী হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সিলেটে বন্যার শুরু থেকেই বিএনপির ও অঙ্গ সহযোগী, সমমনা সংগঠন সমূহের কার্যক্রম গণমাধ্যমে গুরুত্বের সহিত প্রচার হচ্ছে।
গতকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় ৩৬ হাজার ২ শত পরিবারকে ত্রাণ ও শুকনো খাবার, ১ লক্ষ ৯৩ হাজার জনকে তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং ১১ হাজার ৩ শত পরিবারকে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। এই পরিমান সময়ে সময়ে আরো বাড়বে।
তার পরও রাষ্ট্রের সর্বোচ্ছ ব্যক্তি যখন বিএনপির ত্রাণ তৎপরতাকে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে উপহাস করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন বিএনপির এসব কার্যক্রম দেখতে পান না তখন তা দেখার দায়িত্ব সিলেটবাসী সহ দেশবাসীর কাছে ছেড়ে দিলাম।
আপনারা জানেন আমাদের দলের চেয়ারপার্সন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন বারের প্রধানমন্ত্রী আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো সাজানো মামলায় গৃহবন্দি আছেন। তিনি শারিরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান মিথ্যা হুলিয়া নিয়ে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। বন্যা শুরুর পর থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সিলেট জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সমমনা সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে শুরু থেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের বানবাসিদের দারে দারে যাচ্ছি, দলের সাধ্যমত ত্রাণ, নগদ অর্থ এবং তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছেন। বার বার বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ আপডেট নিচ্ছেন। সিলেটবাসীর খবর রাখছেন।
তিনি বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ বলছে- এটি প্রাকৃতিক বন্যা। আসলে এটি প্রাকৃতিক বন্যা নয়। এটি মানবসৃষ্ট বন্যা। আমরা গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি যে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জ জেলায় বন্যার মূল কারণ হাওয়রের বুক চিরে নির্মিত ৮৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অপরিকল্পিত ভাবে ৭৭ কিলোমিটার রাস্তা। এরমধ্যে হাওরাঞ্চল বাঁধ রয়েছে ৩০ কিলোমিটার। শুধুমাত্র একজন ব্যাক্তির সুবিধার জন্যই পানিতে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের এই বিশাল জনগোষ্টিকে।
তিনি বলেন, ভুল সড়ক, ভুল বাঁধ আর অবকাঠামো নির্মাণের প্রতিক্রিয়ায় পানি নামতে পারছে না বলে সহনশীল বন্যা দুঃসহ হয়ে উঠেছে।২০১৭ সালে হাওরের বাঁধ ভেঙে পড়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ইঁদুরকে দায়ী করেছিল। অথচ সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল পাউবোর অনিয়ম আর ঠিকাদারদের দুর্নীতির কথা। স্থানীয় যুবলীগ নেতা এক ঠিকাদারকে আটকও করা হয়েছিল বিমানবন্দর থেকে। এবার সব নিশ্চুপ। শুধু আসামের বৃষ্টিকে দুষলে হবে না, গত এক যুগে হাওর ও সিলেটের জলপ্রবাহের ওপর কী কী অনাচার করা হয়েছ, তার তালিকা বের করতে হবে। দায়ীদের এবং তাদের ভুল উন্নয়ন দর্শনকে একসঙ্গে পরিত্যাগ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, চোখের রঙ্গিন চশমা খুলুন, দেশের বাস্তব চিত্র দেখুন। কানের তালা খুলুন, জনগনের মনের ভাষা শুনুন। দেশের জনগন আর আপনাদের চায় না। জনগন নিজেদের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে দেশ পরিচালনায় দেখতে চায়, জনগন ভোট দিতে চায়, জনগন স্বাধীন ভাবে কথা বলতে চায়। তাই জিয়া পরিবার ও বিএনপির সমালোচনা বাদ দিয়ে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপি নেতা এডভোকেট আশিক উদ্দিন, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, ইসতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপি নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরী, এডভোকেট সাঈদ আহমদ, কোহিনুর আহমদ, এডভোকেট মুজিবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম শাহপরান,এডভোকেট আল আসলাম মুমিন, সাকিল মোর্শেদ,এডভোকেট মোস্তাক আহমদ, সিলেট জেলা যুদলের সদস্য সচিব মকসুদ আহমদ মকসুদ, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব দেওয়ান জাকির হোসেন খান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আজিজুল হোসেন আজিজ, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসান, সিলেট জেলা জাসাসের সদস্য সচিব রায়হান এইচ খান, মাহবুব আলম,ছাত্রদল নেতা আব্দস সালাম টিপু , মনিরুল ইসলাম তুরন,হাজি পাবেল,আল মামুন,রায়হানুল হক, শামসুর রহমান সুজা, মাহবুব আহমদ চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন, আং করিম জুনাক, হারুনুর রশিদ,হুমায়ুন আহমদ, আজমল হোসেন অপু আবুল কাসেম প্রমুখ।