সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি তিন লক্ষাধিক মানুষ

চেম্বার ডেস্ক:: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। এতে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ডুবছে শহর। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছেন বন্যার্তরা। অসহনীয় দুর্র্ভোগে পড়ে কর্মহীন মানুষের মাঝে হাহাকার বাড়ছে।

পাহাড়ী ঢল ও বর্ষণের কারণে ডুবছে শহরের শহরের সুলতানপুর, মোহাম্মদপুর, উকিলপাড়া ষোলঘর, নতুনপাড়া, মুক্তারপাড়া, মধ্যবাজার, সাহেব বাড়ী ঘাট, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, কালিপুর, ওয়েজখালী, হাজীপাড়া সহ শহরের প্রায় সবক’টি এলাকার পাড়ায় পাড়ায় হাঁটু সমান পানি। দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। পানি বাড়া অব্যাহত থাকলে পুরো শহর ডুবে যাবে। এ অবস্থা জেলার প্রতিটি উপজেলার গ্রামে গ্রামে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রাস্তাঘাটে ঢেউয়ের স্রোত বইছে। চলছেনা যানবাহন। এ কারণেই ৫ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে ছাতক, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও তাহিরপুরের যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। ফলে মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা প্লাবিত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সুরমা ও বটের নদীর পানি শিল্পনগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে পানি বন্দি এলাকার বানবাসি মানুষদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশন ২৬৮, নদ-নদীর পানি সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ২১৩ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এক মাসের ব্যবধানে আবারো ও বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার ঘর বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির,মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও হাট- বাজার। তাহিরপুরে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে এ অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এদিকে মাটিয়ান হাওরের প্রবল ঢেউয়ে ভেঙে গেছে তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের রতনশ্রী গ্রামের শতাধিক ঘর বাড়ি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাওর পাড়ের বানভাসি মানুষ। ঢেউয়ের কবল থেকে ঘরবাড়ি রক্ষা করতে দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত পার করছে তারা। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর  পানি বিপদসীমার ৫৫ সে:মি: উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান,  চলতি বছরে ১২ হাজার হেক্টর আউশ ধান চাষাবাদ করা হয়েছে।  ২০ হেক্টর  আউশ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান এস এম আব্দুর রহমান জানান, দুই শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করছে। শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছেনা। এছাড়া জেলায় ৫০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করছে।

জেলা ত্রান ও  পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ২০টি  আশ্রয় কেন্দ্রে ৫শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন, জেলার ১২ টি উপজেলা ও ৪ টি পৌরসভায় ২৫০ মেট্রিক টন চাল ও ৯ লাখ নগন টাকা বিতরন করা হয়েছে।