সর্বশেষ

» শাল্লার ছায়ার হাওরের বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেলো ধান

প্রকাশিত: ২৪. এপ্রিল. ২০২২ | রবিবার

শাল্লা প্রতিনিধি: : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সাথে টানা ২২ দিনের যুদ্ধ করেও শেষ রক্ষা হয়নি হাওরবাসীর। এক এক করে তলিয়ে যাচ্ছে হাওর। রোববার ভোরে ২২ দিনের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার প্রায় লক্ষাধিক কৃষকদের বোরো ধানের জমির বিস্তৃত মাঠের মাউতি নামক জায়গায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে বৃহত ছায়ার হাওর। ভাটি বাংলার হাওরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ এই হাওর। হাওরাঞ্চলের চার জেলার সীমানা এসেছে এই ছায়ার হাওরে। হাওরের পূর্ব পাড়ে নেত্রকোনার খালিয়াজুরি, পশ্চিম পাড়ে সুনামগঞ্জের শাল্লা, উত্তর পাড়ে একই জেলার দিরাই এবং দক্ষিণ দিকে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা। মিশেছে কুশিয়ারা হয়ে ভৈরবের কাছে মেঘনায়।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, রোববার ভোর ৬ টায় শাল্লা উপজেলার ৮১নং পিআইসি মাউতির বাঁধ ভেঙে ছায়ার হাওরে পানি ঢুকতে থাকে। নিমিসেই চোখের সামনে তলিয়ে যেতে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। এ হাওরে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার ৪ হাজার ৬৩৭ হেক্টরসহ, দিরাই উপজেলা কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার বোরো জমিও রয়েছে। সাধারণত বর্ষাকালে মাসের প্রায় ছয় মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে ছায়ার হাওর। এ সময় দিগন্ত বিস্তৃত উন্মুক্ত জলাশয়ে রূপান্তরিত হয় হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা। এক পাড় থেকে আরেক পাড়ে থাকানো গেলে দেখা যায় শুধু পানি আর পানি।

এই হাওরের জমি মূলত এক ফসলি। চৈত্র-বৈশাখ মাসের মধ্যেই হাওর থেকে সব ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেন ছায়ার হাওরের কৃষক। সাধারণত হাওরে পানি আসে তারও পরে।

তবে এবার যেন উলট পালট হয়ে যায় সব হিসেব। ভারত থেকে অসময়ে নেমে আসা ঢলে স্বাভাবিক সময়ের প্রায় এক থেকে দেড়মাস আগে তলিয়ে গেল পুরো হাওর। অথচ হাওর ভর্তি আধা পাকা ধান কাটার জন্য এ সময় অপেক্ষা করছিলেন হাওরের কৃষকরা।
শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী জালালাবাদকে এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ছায়ার হাওরে সবচেয়ে বেশি জমি শাল্লা উপজেলার। কিছু জমি কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন ও কিছু জমি নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষকদের। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে। বাকি অর্ধেক ধান কাটা বাকি আছে। এ অবস্থায় হাওর তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, রোববার ভোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিআইসি নির্মিত বাঁধটিতে ফাটল দেখা দেয়। নিমিষেই বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করতে থাকে। বাঁধ ভাঙার এ দৃশ্য দেখে হাজারো কৃষক তাঁদের অবশিষ্ট জমির ধান কাটতে হাওরে নামেন। কিন্তু বিরাট এলাকা নিয়ে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় তাদের চোখের সামনেই তলিয়ে গেছে পাকা ধান। আনন্দপুর গ্রামের কৃষকরা জানান, সরকারি দলের একজন নেতাকে সভাপতি করে ২২ লাখ টাকার এই প্রকল্প দেওয়া হয়। পিআইসি সভাপতি সিলেটে অবস্থান করেন। তিনি আদৌ কৃষকও নন। কোনদিন হাওর রক্ষা বাঁধে আসননি। তাই বাঁধের কাজে নানা দুর্বলতা ছিল। এই দুর্বলতার কারণেই তাদের চোখের সামনে বাঁধ ভেঙে হাওরের ধান তলিয়ে যাচ্ছে।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, শনিবার রাত ১১ টায় কালবৈশাখী ঝড় হওয়ায় কারণে রাতে কোন লোক বাঁধ এলাকায় ছিলনা। তাছাড়া সেহরির পর পরই বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার সময় তদারকিতে কেউ না থাকায় এ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।

হাওরের কৃষকদের অভিযোগ, সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারি দলের পিআইসি সিন্ডিকেট নামক বাণিজ্যের কারণে প্রতি বছর হাওর রক্ষা বাঁধ মেরামতের গাফিলতি হয়। তাদের সোনালী ফসল তলিয়ে যাওয়ার জন্য পাউবোকেও দায়ী করে কৃষকরা বলেন, হাওররক্ষা বাঁধের কাজে দুর্নীতির কারণেই সঠিক সময়ে কাজ শুরু হয়নি এবং ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

February 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728