সর্বশেষ

» কানাইঘাটের ফরিদ হত্যাকান্ড:চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে র‍্যাব-৯

প্রকাশিত: ০৪. ফেব্রুয়ারি. ২০২২ | শুক্রবার

চেম্বার ডেস্ক:: গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় এলাকায় প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন ফরিদ উদ্দিন নামের এক যুবক। ময়না তদন্ত শেষে পরদিন (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যারাতে তার লাশ দাফন করা হয়। ফরিদ উপজেলার খাসাড়ীপাড়া গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে।

এদিকে, ঘটনার ৪ দিনের মাথায় চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৯। পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত নবনির্বাচিত ইউপি মেম্বারসহ ৩ আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাবের চৌকস দল।

তথ্যটি শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানায় র‍্যাব-৯।

প্রেস ব্রিফিংয়ের র‍্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান (পিএসসি, আর্টিলারি) বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় গ্রামের এফআইভিডিবি স্কুলের সামনে ফরিদ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির লাশ কানাইঘাট থানাপুলিশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত ফরিদ উদ্দিনের বাবা মো. রফিকুল হক কানাইঘাট থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখপূর্বক এবং অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ২ ফেব্রুয়ারি একটি হত্যা মামলা (নং- ০৩) দায়ের করেন।

এই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‍্যাব-৯ গােয়েন্দা নজরদারীর পাশাপাশি ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাবের গোয়েন্দা তথ্য ও বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা যায়, এ হত্যার মূল অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিন মৌলভীবাজার জেলার শেরপুরের কোনো এক এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টা থেকে আজ শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টা পর্যন্ত র‍্যাব-৯ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর থেকে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে।

তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কাওছার আহমদকে সিলেটে দক্ষিণ সুরমা ও মােস্তাক আহমদকে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে র‍্যাবের কাছে তারা জানান, ঘটনার বাদি ও বিবাদীগণ একই এলাকার পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা এবং পরস্পরের নিকটাত্মীয়। এলাকায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্বে থেকেই উভয়পক্ষের মধ্যে মামলা-হামলার ঘটনা চলমান ছিলো। ভিকটিম ফরিদ ও তার শ্যালক কয়েছ উদ্দিন ওরফে কয়ছুর আহমদ মিলে একটি পক্ষ এবং সদ্যসমাপ্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত ইউপি মেম্বার নাজিম উদ্দিন ও তার ভাই হেলাল আহমদসহ অন্যান্য ভাই মিলে আরেকটি পক্ষ। এই দুটি পক্ষের বিবাদপূর্ণ সম্পর্ককে ঘিরে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত থাকতাে। সর্বশেষ নাজিম গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী নাজিম স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নাজিম গ্রুপ ভিকটিম ফরিদকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে।

ঘটনার দুইদিন আগে এ নিয়ে ভিকটিম ফরিদ তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে মেম্বার নাজিমের ভাই এনাম ফরিদকে শায়েস্তা করার হুমকি দিয়ে কমেন্ট করে। ফরিদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এনামের এই কমেন্ট নিয়ে এলাকায় আলােচনা-সমালােচনা চলতে থাকে এবং দুই দিন পরই ফরিদ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

প্রেস ব্রিফিংকালে র‍্যাব আরও জানায়, ঘটনার দিন (৩১ জানুয়ারি) ফরিদ দুপুর ১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী দোনা বাজারে যায় এবং সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে তার আত্মীয় শাহিনকে নিয়ে বেলা ২টার দিকে মমতাজগঞ্জ বাজারের উদ্দেশ্যে নিজের মোটরসাইকেলে করে রওয়ানা দেন। মমতাজগঞ্জ বাজারে পৌছে দুইজন নিজেদের কাজ সেরে বিকাল ৩টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে এফআইভিডিবি স্কুলের সামনে যাওয়ামাত্র পাশ্ববর্তী টিলা থেকে বড় ধারালাে দেশীয় অস্ত্র হাতে দুইজন মুখােশধারী ফরিদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় দুর্বৃত্তরা ফরিদের একটি পা কেটে নিয়ে পালিয়ে যায়। ফরিদের দুই পায়ে এলােপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই ফরিদ মারা যান।

ফরিদের আত্মীয় শাহীনও হামলার শিকার হন। তবে তিনি ঘটনাস্থল থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন এবং স্বজনদের খবর দেন।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, মূল পরিকল্পনাকারী নিজাম গ্রুপের লিডার নিজাম মেম্বার এবং মােস্তাকের সুচতুর পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়িত হয়। তিন গ্রুপে তারা এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটায়। পরিকল্পনামতে- ঘটনার দিন নিজাম মেম্বার এবং মােস্তাক নিজেদেরকে এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার বাইরে রাখার প্রমাণ দেখাতে তারা সিলেট শহরে চলে আসেন। মূলত সিলেট শহরে থেকে হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট বাকী দুটি টিমের কার্যক্রম সমন্বয় করছিলেন এই দুইজন। ২য় গ্রুপটি ভিকটিম ফরিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলো। ৩য় গ্রুপ পূর্ব থেকে নির্ধারিত জায়গা অর্থাৎ- এফআইভিডিবি স্কুলের পাশে জঙ্গলপূর্ণ একটি টিলায় ওৎ পেতে ছিলো এবং মূল পরিকল্পনা অর্থাৎ হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় তৃতীয় গ্রুপ।

র‍্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বাকি পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, ফরিদ উদ্দিন মোটরসাইকেলযোগে গত সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তার ভায়রাভাই শাহীন আহমদকে নিয়ে স্থানীয় মমতাজগঞ্জ বাজার থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। বড়খেওড় এফআইবিডিবি স্কুলের সামনে আসামাত্র কয়েকজন দুর্বৃত্ত ফরিদ উদ্দিনের গতিরোধ করে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। গুরতর আহত অবস্থায় প্রচুর রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান ফরিদ। দুর্বৃত্তদের হামলায় ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে থাকা তার ভায়রাভাই শাহীন আহমদও আহত হন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যায় কানাইঘাট থানার একদল পুলিশ। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) ময়না তদন্তের পর ফরিদ উদ্দিনের লাশ সন্ধ্যার দিকে তার নিজ বাড়ি খাসাড়িপাড়া গ্রামে নিয়ে আসলে পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাদ এশা নিহতের জানাজার নামাজ স্থানীয় খাসাড়ীপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930