গণপরিবহনে ফের অর্ধেক যাত্রী, দোকান খোলা রাত ৮টা পর্যন্ত
চেম্বার ডেস্ক:: করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলায় আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত আসছে। একই সঙ্গে কমছে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার সময়।
এবিষয়ে আজ মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাস ও ওমিক্রনকে আমাদের রুখতে হবে। সেজন্য কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাত ১০টার পরিবর্তে ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশেও ‘ওমিক্রন’ আক্রান্ত কিছু রোগী পাওয়া গেছে। আমরা লক্ষ্য করছি, সপ্তাহ খানেক ধরে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত ১০ দিন আগেও এটি ২০০ থেকে ২৫০-এর মধ্যেই ছিল। গতকালকে প্রায় পৌনে ৭০০ হয়ে গেছে। আজকের সংখ্যা এখনো পাইনি।
যেভাবে বাড়ছে এটা আশঙ্কাজনক মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ওইসব চিন্তাভাবনা করেই মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে গতকালই মিটিং হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব সেই সভা আহ্বান করেছিলেন। আমি ছিলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। সচিবরাও ছিলেন।
তিনি বলেন, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি, সিভিল সার্জনসহ অন্যান্যরা যুক্ত ছিলেন। উনাদেরকে বেশকিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো এখনো ফাইনাল না, মন্ত্রিপরিষদ থেকে ফাইনাল চিঠিটা যাবে।
তিনি বলেন, ফাইনাল হওয়ার আগে যে আলোচনা ও প্রস্তাবনা হয়েছে সেগুলো গতকালকেও বলেছি। করোনা এবং ওমিক্রনকে রুখতে হবে। সে কারণেই এ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে।
জাহিদ মালেক বলেন, যানবাহনে (বাস, ট্রেন ও স্টিমার) মাস্ক ছাড়া চলাচল করা যাবে না। যদি কেউ চলাচল করে তাহলে জরিমানার মধ্যে পড়বে। এই সিদ্ধান্ত মোটামুটি হয়েছে, আমাদের প্রস্তাবনা রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, যাত্রীসংখ্যা বাসে ও অন্যান্য যানবাহনে অর্ধেক নেওয়ার প্রস্তাবনা করা হয়েছে। হোটেলে-রেস্টুরেন্টে মাস্ক পরে যেতে হবে। মাস্ক ছাড়া গেলে দোকানদারেরও জরিমানা হবে, যে যাবে তারও জরিমানা হতে পারে।
তিনি বলেন, দোকানের সময়সীমাও কমিয়ে আনা হয়েছে। ১০টার পরিবর্তে রাত ৮টা পর্যন্ত। এটাও প্রস্তাবনা করা হয়েছে।
সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘হোটেল-রেস্টুরেন্টে খেতে হলে টিকা দেওয়ার কার্ড দেখাতে হবে। মাস্ক পরে যেতে হবে।’
তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল চলবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যদি সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়, তবে স্কুলের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে। তখন আর স্কুল চালিয়ে রাখা যাবে না। এখনো সেই সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি, সেই পরিস্থিতি এখনো দেশে বিরাজ করছে না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে জিজ্ঞাসা করছেন, লকডাউন দেওয়া হবে কি না, পাশের দেশে (ভারতে) তো দিয়েছে। আমরা সেই চিন্তা এখনো করছি না। যদি অবস্থা আওতার বাইরে যায়, সংক্রমণ অনেক বৃদ্ধি পায়, তাহলে লকডাউনের চিন্তা মাথায় আছে। পাশাপাশি স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দরে স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনের ক্ষেত্রে পুলিশ পাহারা বসানো হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে।’
১৫ দিন পর এসব বিষয় বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ডিসি, এসপিসহ যারা জেলা পর্যায়ে দায়িত্বে আছেন, তাদের বলা হয়েছে। নির্দেশনাগুলো তারা যখন হাতে পাবেন, দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন। আগে ১৫ দিনের কথা বলা হয়েছে। আজকে আমি প্রস্তাব করেছি ১৫ দিন নয়, সাতদিন করার জন্য। সেটা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলা হয়েছে। তিনি এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা দেশকে নিরাপদে রাখতে চাই। দেশের অর্থনীতি ভালো থাকুক। জীবনযাত্রা স্বাভাবিকভাবে চলুক। এজন্য আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। শুধু সরকার কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একা পারবে না। ঝুঁকিপূর্ণ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা সাবধানে থাকবেন। ওমিক্রন দু-তিনগুণ বেশি হারে সংক্রমণ করে।’
এর আগে ওমিক্রন মোকাবিলায় সোমবার (৩ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে নানান ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।