সিলেটের সেই প্রকৌশলী তুষার কান্তিকে শোকজ

ডেস্ক রিপোর্ট: সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহার বিরুদ্ধে সংসদীয় কমিটিতে দ্বৈত নাগরিকত্ব, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, সরকারি অর্থ লোপাটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। সংসদীয় কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ তদন্ত করে ওই কর্মকর্তাকে ক্লিন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। তবে সংসদীয় কমিটি ওই তদন্ত নাকচ করে ওই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর সুপারিশ করেছে।

বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কারণ দর্শানোর নোটিশের সদুত্তর না পেলে ভবিষ্যতে তাকে সংসদীয় কমিটিতে তলব করাও হতে পারে।

জানা গেছে সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে তুষার কান্তি সাহার বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ে ঘনিষ্ঠতা, সরকারের অনুমতি না নিয়ে ভারত সফর ও দ্বৈত নাগরিকত্ব ধারণ, কাজ না করে অর্থ লোপাট, তথ্য গোপন করে দীর্ঘ এক বছর ভারতে বসবাস, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরে সংসদীয় কমিটি বিষয়টি আলোচনা করে মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করার নির্দেশনা দেয়। পরে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তার ও যুগ্ম সচিব মাহবুবের রহমানকে ওই ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে ওই কর্মকর্তাকে প্রকারান্তরে ক্লিন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এতে বলা হয় নাম-ঠিকানাবিহীন অভিযোগের বেশিরভাগই তথ্যভিত্তিক নয় এবং যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে প্রশাসনিকভাবে তা তদন্ত করাও সম্ভব নয়।

জানা গেছে, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে কেবল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়েও অনুপস্থিত থাকার বিষয়টিকে এক ধরনের অবহেলা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য অভিযোগের বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ সম্বন্ধিত নয় বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, তুষার কান্তি সাহা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিতে উপস্থিত হয় সবগুলো অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম অত্যাচার করার প্রেক্ষিতে তার কন্যাকে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই সময় ভারতে পাঠিয়ে দেন বলে দাবি করেন। তার কন্যা সেখানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন বলেও তদন্ত কমিটিকে জানান।

সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিটি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনকে নাকচ করে দিয়েছে। তারা একজন কর্মকর্তার পুত্র-কন্যা ভারতে অবস্থান করা সত্ত্বেও দীর্ঘ আট বছর পাসপোর্টবিহীন থাকার বিষয়টিকে রহস্যজনক মনে করছেন। এছাড়া চাকরি জীবনে দুইবার দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টিও রহস্যজনক মনে করে। সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে ওই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় বিষয়টি সুরাহা করতে না পারলে প্রয়োজনে তারা ওই কর্মকর্তাকে সংসদীয় কমিটিতে তলব করবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি রওশনারা মান্নান বলেন, আমি সভাপতি হিসেবে আজই প্রথম বৈঠক করেছি। এজন্য আমি বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। তবে জাতির পিতার জন্মদিনে কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হয়ে ওনার থাকার বিষয়টি আমাদের কাছে অবহেলা মনে হয়েছে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। আমরা ওই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে বলেছি।

কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছাড়াও বৈঠকে এনামুল হক, রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার, শেখ সালাহউদ্দিন এবং মেরিনা জাহান অংশগ্রহণ করেন।