যুক্তরাজ্য প্রবাসীর বাসা দখল, প্রশাসনের সহযোগিতা চান কয়েস আহমদ

চেম্বার ডেস্ক:: যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়েস আহমদ,জনৈক জামিল আহমদ কর্তৃক নিজ বাসা দখল ও জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের ড.রাগিব আলী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন প্রবাসী কয়েস আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর সম্পত্তি উদ্ধার ও তাকে বিভিন্ন রকম হয়রানী থেকে মুক্তি ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নীচে যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়েস আহমদ কর্তৃক সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হল।

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,
শুরুতেই পরম করুণাময় আল্লাহর নিকট কোটি কোটি শুকরিয়া। একইসাথে আমার আহবানে আপনাদের মূল্যবান কিছু সময় আজ আমাকে দেওয়ার জন্য আপনাদের প্রতি আমার বিনীত কৃতজ্ঞতা। শুরুতেই আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই- দীর্ঘদিন থেকে আমি পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছি। এদিকে আমার যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছোটো ভাই দিলওয়ার আহমদ দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকর এলাকার আবদুস সোবহানের মেয়ে শাহনাজ বেগম রিনির সাথে ১৯৯১ ইংরেজির ২ নভেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহ পরবর্তী দিলওয়ারের বিবাহিত স্ত্রী রিনি বেগমের পরকীয়ার জড়িত থাকার (প্রমাণসহ) বিষয়টি আমাদের গোচরীভুত হয় এবং তৎসময়ে শাহনাজ বেগম রিনি গর্ভবতী বলে খবর আসে। এই ঘটনায় দিলওয়ার মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং একপর্যায়ে বিয়ের মাত্র ৪ মাসের মাথায় ০২ ফেব্রæয়ারি ১৯৯২ ইংরেজি তারিখে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট সিলেটের আদালতে স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে হলফনামা সম্পাদনের মাধ্যমে স্ত্রী শাহনাজ বেগম রিনিকে তালাক প্রদান করে। তালাকপ্রাপ্তির পর উল্লেখিত শাহনাজ বেগম রিনি নিজ পিত্রালয়ে চলে যান এবং সেখানে এক পুত্র সন্তানের জন্মদান করেন। শাহনাজ বেগম রিনির পিতৃপরিচয়হীন ওই পুত্রসন্তানের নাম জামিল আহমদ। বিষয়টি আমলে নিয়ে আমার ভাই প্রবাসী দিলওয়ার আহমদ ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ ইংরেজিতে হলফনামা সম্পাদনক্রমে জামিল আহমদ দিলওয়ারের ঔরসজাত সন্তান নয় এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধীকারী নন মর্মে বিজ্ঞ নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ঘোষণা প্রদান করেন। আর শাহনাজ বেগম রিনির এই প্রতারণার কারণে দিলওয়ার এখন মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছে।
সুপ্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ
এদিকে দিলওয়ারের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী শাহনাজ বেগম উপায়ান্তর না পেয়ে দক্ষিন সুরমার উলালমহল গ্রামের আবদুল আলীর ছেলে লইলু মিয়ার সাথে ২য় বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

২০০৭ সালে পিতৃপরিচয় হীন অসহায় ছেলে জামিল নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে আমি আমার বাসা নগরীর রংধনু ৫৩, রোড নং ১, চৌকিদেখি বাসা তদারকির দায়িত্ব তুলে দেই এবং লেখাপড়ার ব্যয়ভার গ্রহণ করি। এরপর আমি ফের যুক্তরাজ্যে চলে যাই। পরবর্তীতে জামিল আহমদ যথারীতি আমার বাসায় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়।
জাতির বিবেক সাংবাদিকবৃন্দ
চলতি বছরের ১০ জুন আমি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে জামিল আহমদের নতুন রূপ দেখতে পাই। আমার ঘরের দামি দামি সমুদয় ফার্নিচারসহ ইলেকট্রিক্যাল পণ্য দেখতে না পেয়ে জামিল আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জামিল আহমদ উল্টো আমাকেই হুমকী প্রদান করতে থাকে এবং এই বিষয়ে কথা বললে আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার হুমকী প্রদর্শন করে। আমি এই ঘটনাায় হতবম্ভ এবং নিরাপত্তাহীন মনে করে দেশে ফেরার ৬ দিনের মাথায় ১৭ জুন এয়ারপোর্ট থানায় ৭৯০ নং ডায়েরি করি। জামিল আহমদ পরিকল্পিতভাবে এর আগে আমি যুক্তরাজ্য থাকাকালীন আমাকে আসামী করে ২০২০ সালে ১৭ ফেব্রæয়ারি মাননীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নং আমলী আদালত সিলেট এ মোগলাবাজার সি.আর ১৭/২০২০ নং মিথ্যা মামলা দায়ের করে।ওই মামলার পিবিআই’র তদন্ত প্রতিবেদনে অসত্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যার স্মারক নং পিবিআই/সিলেট জেলা/ ১১৪৮, তাং-১৬.০৬.২০২০ ইং। এই প্রতিবেদনে জামিল আহমদ নারাজী প্রদান করলে সিআইডি, সিলেট জোন ১৫.০৯.২০২১ ইং ১২১১/২ (১)তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলক্রমে ঘটনার সত্যতা পান নাই মর্মে উল্লেখ করেন।

সংগ্রামী কলম সৈনিক ভাইয়েরা
এই ঘটনার পর প্রতারক ও কৌশলী জামিল আহমদ নিজ এলাকায় নিজেকে দিলওয়ার আহমদের ছেলে বলে পরিচয় প্রদান করতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় পরিচয় পত্রে ও পিতার নামের স্থানে দিলওয়ার লিখে সকল কার্যক্রম চালাতে থাকে। এই সংবাদে আমার পরিবার ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পরি এবং দিলওয়ার আহমদ ২২/০৮/২০২০ ইংরেজি তারিখে নির্বাচন কমিশন বরাবরে জামিল আহমদ, দিলওয়ারের পুত্র নয় মর্মে নাম কর্তনের আবেদন করে। এই ঘটনার জামিল আহমদ আরো ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে এবং দক্ষিণ সুরমার নৈখাইস্থ আমার গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের উপর আক্রমন চালিয়ে জোর পূর্বক দুটি কক্ষ দখল করে নেয়। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই এবং মা সহ জামিলকে অন্যত্র চলে যেতে অনুরোধ করি। কিন্তু জামিল দখল ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমি ২০ জুলাই ২০২১ তারিখে সহযোগীতা কামনা করে পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করি। অবশেষে জামিল আহমদ বাড়ি ছাড়িয়া গেলেও পরবর্তীতে ২৬.০৮.২০২১ ইংরেজি তারিখে ফের বাড়ির তিনটি কক্ষ দখল করে নেয় এবং আমার নিকট ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তৎপর আসামী জামিল নিজ শরীরে বেøড দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে ১২.০৯. ২০২১ ইংরেজি তারিখে আমিসহ ৯ জনকে আসামী করে মিথ্যা বর্ণনায় মোগলাবাজার জি. আর ১৬১/২০২১ মামলা দায়ের করে। এর পর আমি ১৬ .০৯.২০২১ ইংরেজি মাননীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ২য় আদালত সিলেট মোগলাবাজার সি.আর ৯৫/২০২১ মামলা দায়ের করি।

শ্রদ্ধেয় সাংবাদিকবৃন্দ
জামিল আহমদ আমার বাড়ির সম্পত্তি আত্মসাত করণের জন্য সন্ত্রাসীবাহিনী নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা জামিল নিজেকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পরিচ্ছন্ন নেতা আসাদ উদ্দিন আহমদের নাম বিক্রি করে বিভিন্ন স্থানে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রবাসে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে নিজেদের উপার্জিত টাকা দেশে পাঠিয়ে অগ্রগতির চাকা সচল রাখি। সরকারও প্রবাসীদের নিরাপত্তা রক্ষায় যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যারা বছরের পর বছর নিজের দেশ ও প্রিয়জনদের থেকে দূরে থেকে রেমিটেন্স যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি, তাদের সম্পদ এবং জীবন কখনোই দুস্কৃতির কবলে হারিয়ে যেতে পারে না। আমি আপনাদের ভাই/বন্ধু হিসেবে কুখ্যাত দুস্কৃতিকারী জামিল আহমদের বিষয়ে তদন্তক্রমে সরেজমিন সংবাদ প্রকাশ চাই। আপনাদের সত্য এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে মা-ছেলের অপকীর্তির সকল হিসেব প্রকাশ হবে। আমি একই সাথে আপনাদের মাধ্যমে জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্বড়িত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বিনীত
কয়েস আহমদ
রংধনু ৫৩, রোড নং ১
চৌকিদেখি, সিলেট