পরীমনি এ কোন সংস্কৃতি ছড়াছেন? এর সংবাদ মূল্য কত?
মুহিত চৌধুরী: পরিমনি বাংলাদেশের আলোচিত-সমালোচিত,জননন্দিত এবং জননিন্দিত একজন অভিনেত্রী।
চিত্রনায়িকা পরীমনি অভিযোগ করেছিলেন, গত ৮ জুন গভীর রাতে বোট ক্লাবে তিনি নির্যাতিত হয়েছেন। এ ঘটনার পর তিনি সাভার থানায় ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ এনে আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এর ধারাবািহকতায় গত ৪ আগস্ট আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাবে। এর পরই বেরিয়ে আসে পরীমনির অন্ধকার জীবনের নানা দিক।
গত ২৪ অক্টোবর ছিলো পরীমনির জন্মদিন। এই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনি যা করলেন তা কি বাঙালি সংস্কৃতির সাথে যায়? এ প্রশ্ন এখন অনেকেরই। লুঙ্গি বাঙালিদের অন্যতম জনপ্রিয় পোষাক। গ্রাম বাংলায় এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক।
পরীমনি তার জন্মদিনে এই লুঙ্গিকেও করলেন বির্তকিত। তিনি লুঙ্গি পরে অশালীন নৃত্য করলেন। লাল টপ ও সাদা ধুতির মতন একটি পোশাক যা আবার লুঙ্গির মতন করে কাছা দেওয়া। অর্থাৎ উরু থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পুরোই উন্মুক্ত ছিলো তার। পরে বলিউডের শাহরুখ দীপিকার জনপ্রিয় গান ‘লুঙ্গি ডান্স’ এর তালে নেচে ওঠেন পরীমণি।
তাহলে পরীমনি এ কোন সংস্কৃতি ছড়াছেন? এর সাথেতো বাঙালি সংস্কৃতির কোন সাদৃশ্য নেই।
সংস্কৃতি হলো মানুষের জ্ঞান, আচার-আচরণ, বিশ্বাস, রীতিনীতি, নীতিবোধ, চিরাচরিত প্রথা, সমষ্টিগত মনোভাব, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সমাজের সাহিত্য, সংগীত, ললিত কলা, ক্রিড়া, মানবিকতা, জ্ঞানের উৎকর্ষ ও আরো অনেক শান্তি ও সৌন্দর্যের সমাহার এবং অর্জিত কীর্তিসমূহ। আর এসব নিয়েই বাঙালি সংস্কৃতি।
সুতরাং স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে পরীমনির সংস্কৃতি আর বাঙালি সংস্কৃতি পুরোপুরি আলাদা দুটি বিষয়। পরীমনির ছড়ানো এই সংস্কৃতি বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে, নৈতিক অবক্ষয়ের জন্ম দেবে, যুবসমাজকে অস্থিরতা এবং অনৈতিকতার দিকে দাবিত করবে।
যে
কোন বিষয় নিয়ে সংবাদ করতে প্রথমে একজন সাংবাদিককে দেখতে হবে বিষয়টির সংবাদ মূল্য কতটুকু। নি:সন্দেহে পরীমনির কর্মকান্ড বা তৎপরতার সংবাদ মূল্য আছে। অনেক ফালতু বিষয়ের সংবাদ মূল্য থাকে। এ সংবাদ মূল্য আবার রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কাছে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্ব জাতীয় স্বার্থকে দিতে হয়। এটাই সাংবাদিকতার অন্যতম নিয়ম।
অত্যন্ত লজ্জার বিষয়, আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম এক শ্রেণীর সাংবাদিক পরীমনি কী ড্রেস পরেছে, শরীর কতটুকু দেখা যাচ্ছে, বাথরুমে যাচ্ছে, আদালতে যাচ্ছে ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। আর পরীমনিও তাদেরকে হতাশ না করে এই সব সাংবাদিকের গালে কেকের লাল ক্রিম মাখিয়ে দেন।
একটি মহল যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশকে অস্থীতিশীল করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চায় তখন সাংবাদিকদের পরীমনির উদোম নৃত্য নিয়ে ব্যস্ত থাকা কতটুকু সমীচীন এ নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, প্রশ্ন ওঠতে পারে তাদের দেশ প্রেম নিয়ে।
আর পরীমনি নিয়ে সর্বশেষ যে কথাটি বলতে চাই সেটা হলো- অশ্লীতা আর বির্তকিত পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে ভক্ত তৈরি করা যায়। অশালীন কাজ করে লাখ লাখ ফলোয়ার তৈরী করা যায় কিন্তু আজীবন তারকা থাকা যায় না, শাবানা,কররী,ববিতা হওয়া যায় না।
(মুহিত চৌধুরী: সিনিয়র সাংবাদিক, সভাপতি সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব)