সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

চেম্বার ডেস্ক:: প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ যে কোনো জাতীয় প্রয়োজনে এই বাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

আজ বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি ইউনিটকে পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলাসহ আর্থসামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।

 

সরকারপ্রধান বলেন, ‘অপারেশন কভিড শিল্ড’ এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করোনা প্রতিরোধকল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে সম্মান ও মর্যাদা, যা বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।

সম্প্রতি রেজিমেন্ট অব আর্টিলারিতে ৩টি আর্টিলারি ব্রিগেড, ১টি এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড, ৫টি ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্ট, ৫টি এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি রেজিমেন্ট, ১টি ডিভিশন লোকেটিং ব্যাটারি, ১টি মর্টার রেজিমেন্ট, ১টি এমএলআরএস রেজিমেন্ট এবং ১টি স্বতন্ত্র এমএলআরএস ব্যাটারি সংযোজন করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

আকাশ প্রতিরক্ষায় সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এয়ার ডিফেন্স শাখার জন্য ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য মিসাইল (এফ এম-৯০ স্যাম সিস্টেম) এর প্রশিক্ষণের সুবিধার্থে একটি কম্ব্যাট সিমুলেটর ২০১৯ সালে সংযোজন, একই বছর এক ব্যাটারি অত্যাধুনিক ওয়েরলিকন রাডার কন্ট্রোল গান সিস্টেম ও স্কাই গার্ড-৩ রাডার সংযোজন এবং আরও ১ ব্যাটারি ওয়েরলিকন গান সিস্টেম ক্রয়ের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান সরকারপ্রধান।

 

শেখ হাসিনা বলেন, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ সেনাবাহিনীর আভিযানিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জরুরি মেডিক্যাল ও রোগী স্থানান্তর সেবা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সহায়তা প্রদান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ পরিবহনসহ নানাবিধ মিশন পরিচালনায় সক্ষমতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা এই এভিয়েশন বহরে ৬টি এমআই ১৭১ শাহ, ১টি কাসা-সি২৯৫ডব্লিউ, ৪টি ডায়মন্ড-ডিএ৪০এনজি এবং ২টি বেল-৪০৭ জিএক্সআই বিমান সংযুক্ত করেছি। ভবিষ্যতে এই গ্রুপের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ সংযোজনের পরিকল্পনা করছি।

 

আর্মস ও সার্ভিসের সঙ্গে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর আধুনিকায়নেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২২ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ২৭ আরই ব্যাটালিয়ন এবং ২৩ আরই ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছি। এ ছাড়া আরও ১টি এডহক সিএসসি সেল, ২টি নতুন এডহক ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এবং ইসিএসএমই এর সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। সম্প্রতি ৬টি এলসিটি ও ২টি টিসিভি ক্রয় করেছি এবং ৫টি বিকে বার্জ এর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

 

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী।

 

অনুষ্ঠানের শেষে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সেনাপ্রধান আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে ৪, ১২ ও ২০ ফিল্ড, ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৫ ও ৭ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ১ ও ২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ এবং এনসিও একাডেমিকে জাতীয় পতাকা প্রদান এবং মুজিব রেজিমেন্ট ও রওশন আরা রেজিমেন্টকে আর্টিলারির নতুন পতাকা প্রদান করেন।

 

অনুষ্ঠান থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালামও জানানো হয়।