কেউ বঞ্চিত হবে না, প্রতিটি নাগরিক করোনার টিকা পাবে: প্রধানমন্ত্রী

চেম্বার ডেস্ক:: বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক করোনার টিকা পাবে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষই টিকা বঞ্চিত হবে না। সবাই যাতে টিকা পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করবো।

 

বুধবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১১৯তম এবং ১২০তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

এসময় বিসিএস কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় এটা মাথায় রাখতে হবে এই দেশ আমাদের। এই মাটি আমাদের। এই মানুষ আমাদের। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং একটা সুন্দর জীবন দেওয়াটাই হচ্ছে লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য পূরণে মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে এই মাঠ প্রশাসন। কাজেই আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সেভাবে পালন করবেন। এটাই আমি চাই।

 

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি অনেকেই এই করোনাকালীন মানুষের সেবা করতে গিয়ে জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন। প্রশাসনের সবাই টিকাদান কর্মসূচিতে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন এবং টিকা দিয়ে যাচ্ছেন। এতো সুন্দরভাবে টিকাদান কর্মসূচিগুলো চলছে, সেজন্য সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।

তিনি বলেন, আমি পৃথিবীর অনেক দেশে দেখেছি টিকা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সমস্যা হয়েছে। এমনও হয়েছে একজন এক ডোজ পেয়েছে হয়তো ছয় মাস হয়ে গেছে দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছে না। বাংলাদেশে কিন্তু আমরা পরিকল্পিতভাবেই টিকা দিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, টিকাদানে আমাদের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বাস্থ্যবিভাগ এবং আমার নিজের দলের নেতাকর্মীদেরও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছি। যেন মানুষ টিকা ঠিকমতো পায়। সবাই কাজ করায় এখানে আমরা একটা বিরাট সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। বাংলাদেশের কোনো মানুষই টিকা বঞ্চিত হবে না।

 

প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন ও প্রশাসন কোর্স থেকে আর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সময় উপযোগী প্রশাসন গড়ে তুলে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আপনারা নিবেদিত থাকবেন। জনগণের পাশে থাকবেন, মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করবেন।

 

সনদপ্রাপ্ত সবাইকে অভিনন্দন জানান সরকার প্রধান। সেই সঙ্গে বিচারের বাণী যাতে নিভৃতে না কাঁদে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা।…প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আপনাদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কাজ করতে হবে জনগণের জন্য। জনগণের সেবক হিসেবে।’

 

এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে এই হচ্ছে আমার জীবনের স্বপ্ন। এই অল্প কথার মাধ্যমে এটা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি কী কারণে সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন।

 

‘মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি প্রদেশ ছিল বাংলাদেশ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সকল সুবিধা থেকে ছিল বঞ্চিত। স্বাধীনতার পর তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেন। যেখানে একটি টাকাও রিজার্ভ মানি ছিল না। কোনো খাদ্য ছিল না।’

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেইভাবেই কিন্তু শূন্য থেকে যাত্রা শুরু। বঙ্গবন্ধু একদিক থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলেন, অন্যদিকে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের কাজ করেন।’

 

বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ ভাষণের লাইন তুলে ধরে তার জ্যেষ্ঠকন্যা বলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় এই গরিব কৃষক, আপনের মাইনে দেয় এই গরিব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়, আমি গাড়ি চলি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন, ওরাই মালিক।’

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মালিক জনগণ। আমাদের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদেও এই কথা বলা আছে। কাজেই সেই শিক্ষাটাই তিনি দিতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ২১ এর ২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি সরকারি কর্মচারী সার্বক্ষণিকভাবে জনগণের সেবা প্রদানে বাধ্য।’

 

প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে জনগণের সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করবেন।