সর্বশেষ

» পুনশ্চ ২১শে আগস্ট এবং মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ হাসিনা: অ্যাডভোকেট শাকী শাহ ফরিদী

প্রকাশিত: ২০. আগস্ট. ২০২১ | শুক্রবার

অ্যাডভোকেট শাকী শাহ ফরিদী:: ২০০৪ সাল- কৈশোরের উন্মাদনা, ‘পড়ালেখা করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে’ টাইপ কথার অন্তর্নিহীত তাৎপর্য খোঁজে আত্নদ্বন্দ্বে খেই হারানো, বঙ্গবন্ধুর জাদু মাখা কণ্ঠের প্রেমে পড়ে দেশপ্রেমের মোটিবেশন পাওয়া, পাঠ্যপুস্তকে পড়া ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’ এবং দেশ নিয়ে অনেকগুলো কবিতার আট-দশ চরণ মুখস্থের হিড়িকে কিংবা প্রয়াসে গর্জে ওঠা দেশপ্রেম আর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারিগর হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হওয়া, আই হেইট পলিটিক্স নাকি আই শুড গো ফর ইট নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে নিমজ্জিত হওয়া, শেখ হাসিনা নাকি খালেদা জিয়া কে ভালো কে খারাপ তা ভেবে ভেবে তেমন কিছু বুঝতে না পেরে সে ভাবনার পিছু ছেড়ে দেওয়া- এমনই ছিল ২০০৪ সালের দিকে আমার মত লাখো তরুণ বা কোটি কিশোরের মনোজগতে ভাবনার অস্থির ছুটোছুটির মোটামুটি চিত্র, দেশে তখন বিএনপি-জামায়াত সরকার।

পরিবার থেকে বলা হতো সংবাদপত্র জ্ঞানের ভান্ডার, পত্রিকা পড়া মাস্ট ছিলো কিন্তু পত্রিকা পড়ে শান্তি পেতামনা- খেলাধুলা, পড়াশোনা এই পেইজগুলো ছাড়া বাকি খবরগুলো অনেক নেগেটিভ ছিল যেমন “বাংলাদেশ দূর্নীতিতে হ্যাটট্রিক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, দেশজুড়ে নিয়মিত বোমা এবং গ্রেনেড হামলা, একসাথে ৬৪ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ, জঙ্গিদের উত্থান, ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে হত্যাচেষ্টা, সিলেটের মেয়র কামরানকে হত্যাচেষ্টা, সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের এখানে ওখানে শত কোটি টাকার চাঁদা দাবি করা, ঘুষ চাওয়া, লাগামহীন দূর্নীতি ইত্যাদি খবরই থাকতো পত্রিকার সিংহভাগ জুড়ে৷ আবার দেশে বেড়েছিল মেয়েদেরকে এসিড ছুড়ে মারার মত জঘন্য অপরাধ, সংখ্যালঘু নির্যাতন, চলচ্চিত্রে ছিল ব্যাপক অশ্লীলতা।

তখনকার আরো কিছু খবরের শিরোনাম বলি- “দেশে এক কোটি একুশ লাখ ভুয়া ভোটার, পুলিশ নিয়োগে দলীয়করণ এবং টাকার লেনদেন, বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে ১০০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি তারেকের, ১৭ দেশে তারেক-মামুনের হাজার কোটি টাকা পাচার, রমরমা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, সক্রিয় খাম্বা সিন্ডিকেট, মন্ত্রীর পিএ শত কোটি টাকার মালিক, বিমানকে নিঃস্ব করে খালেদার ভাই সাঈদ ইস্কান্দারের সম্পদের পাহাড়, টানা পাঁচবার বিশ্বে দূর্নীতিতে টপ বাংলাদেশ, বড় পুকুরিয়া কয়লা প্রকল্পে ১৫০ কোটি দূর্নীতি, সাবমেরিন ক্যাবল টেন্ডার দূর্নীতি, সমবায় ব্যাংক লুটে সরকারদলীয়দের মহোৎসব, বিদুৎ এর ১৪’শ কোটি টাকা তারেক-মামুন মিলে হজম, দূর্নীতির কারনে ফাইবার ক্যাবল স্থাপন অনিশ্চিত ইত্যাদি ইত্যাদি”৷ ভাবুনতো সেইসময় আমাদের মতো তরুণদের কাছে এমন খবরগুলো কেমন লাগতো? খুব সহজেই আমরা সরকারদলকে ঘৃনা করা শুরু করে দিয়েছিলাম অজান্তেই৷ এরকম অনেক খবরের জন্ম বর্তমান সরকারের আমলেও হয়েছে এবং হচ্ছে, যেমন খাম্বা হেলে পড়ে ক্যাসিনো গজিয়েছে হয়তো!, দূর্নীতির নতুন ক্ষেত্রও যোগ হয়েছে অনেক৷ দূর্নীতি কিংবা খারাপ খবর দেশের তরুণদেরকে সরকারবিরোধী করে তুলে৷ সুতরাং খেয়াল রাখতে হবে বর্তমান সরকারকেও যেন এসব পুকুরচুরিগুলো সরকারি মদদে না হয়, দিনশেষে জনতার মন জয়েই রাজনীতির সফলতা নিহিত।

যাই হোক, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকায় কারনে তখন তারা এসব ব্যাপারে নিরব থাকতেন, আমরা দেখতাম তখন এসব দূর্নীতি আর অপশাসনের বিরুদ্ধে কন্ঠ উঁচিয়ে যিনি কথা বলতেন, আন্দোলন করতেন, প্রতিবাদ করতেন- তিনি শেখ হাসিনা, সঙ্গত কারনেই তরুণ মন শেখ হাসিনাকে ব্যাটার লিডার মনে করত এবং দূর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসী কণ্ঠ মনে করত। অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গতভাবেই আমার, আমাদের মনে তখন বিএনপি-জামায়াতের দেশ পরিচালনার ব্যাপারে ব্যাপক নেগেটিভ ধারনা বিদ্যমান, তরুণ মনে দেশপ্রেমের স্থান রাজনীতির যাবতীয় কূটকৌশলের উপরেই থাকে।

হ্যা, বিএনপির অনেককেই আবার ভালোও লাগতো যেমন সাইফুর রহমান, এহসানুল হক মিলন (নকল বন্ধে খুবই ভালো ভূমিকার জন্যে), এমনকি সাদা সিম্পল পোশাকে তরুণ নেতা তারেক রহমানকে দেখেও মনে হতো নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে এটাইবা কম কিসে কিন্তু বিধি বাম, পত্রিকা খুললেই হোয়াইট পোশাকের তারেক সাহেবের হোয়াইট কলার ক্রাইমের খবরের ছড়াছড়ি, তখন আর ভালো লাগতোনা দেখে।

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট- শেখ হাসিনার উপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা, প্রাণনাশের চেষ্টা, ২৪ জন নিহত আহত ৫০০ শতাধিক৷ যে শেখ হাসিনাকে দেখলাম তৎকালীন সরকারের সীমাহীন করাপশনের বিরুদ্ধে কথা বলতে, দেশের তরে যিনি বিদেশ থেকে ফিরে পিতা-মাতাহীন স্বদেশ মৃত্তিকায় চষে বেড়ালেন দেশের ভবিষ্যতের জন্যে, তাকে মেরে ফেলবেন? তার পিতা এবং উনার শক্তিগুলোকে হত্যা করেও শেষ হয়নি রক্তের হোলিখেলা? উপুর্যুপুরি গ্রেনেডে তাকে প্রাণে মেরে ফেলবেন, সরিয়ে দিবেন রাস্তা থেকে? এইটুকু আর মেনে নিতে পারলামনা, ভীষণ খারাপ লাগলো। আমিতো এমনও ভাবতাম এমন যদি হতো, খালেদা-হাসিনা একজন দেশের রাষ্ট্রপতি আর আরেকজন প্রধানমন্ত্রী, দুইদল থেকে মিলেমিশে সৎ দক্ষ আর প্রতিভাবান এবং অভিজ্ঞরা মিলে মন্ত্রীসভা, ফলস্বরূপ উন্নত এক বাংলাদেশের দিকে আগাতাম আমরা, সেই ভাবনাগুলো হয়তো কিশোর মনের নরম নিষ্পাপ প্রেমের মতই বাস্তবতা বিবর্জিত ছিল। আহা তাতো দুরে থাক উল্টো সরকারি মদদে বোমা হামলা, মেরে ফেলার ঘৃন্য অপচেষ্টা, জজ মিয়া নাটকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার তামাশা, এগুলো দেখে বিএনপি সরকারের প্রতি অনেক খারাপ ধারনা আসলো।

কপালগুণে, মহান রবের হুকুমে আর কৃপায়, নেতাকর্মীদের জীবন বাজি রাখা ত্যাগে ভয়ংকর মরনফাঁদ আর মৃত্যু উপত্যকা থেকে বেঁচে ফেরা এক মৃত্যুঞ্জয়ীর নাম “শেখ হাসিনা”, ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে আসা এক সাহসী বীরের নাম শেখ হাসিনা৷ কতবার মারবেন তাকে? ৭৫-এ তো একবার মেরেই ফেলেছেন, তারপর আরো প্রায় ২০/২৫ বার মারার চেষ্টা৷ যতবার মৃত্যু থেকে ফিরে আসেন- আরো পরিনত হন তিনি, আরো সাহসী হন তিনি৷ শেখ হাসিনা কেবলই একটি নাম নয়- একটি অনবদ্য কাব্য, একটি ইতিহাস৷ শেখ হাসিনাকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারেন হয়তোবা সময়ের সুবিধা বা তার অপব্যবহারে কিন্তু শেখ হাসিনাকে ধ্বংস করতে পারবেননা, শেখ হাসিনা একটি অনুভুতির নাম, একটি আবেগের নাম, একটি অনুপ্রেরণার নাম।

প্রিয় বাংলাদেশ- শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাড়াও, হাজার শকুনের ভয়াল থাবা থেকে প্রিয় স্বদেশকে যিনি বাঁচান, শত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যিনি বলেন ‘আমার বাংলাদেশ’- সেই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ভীষণ প্রয়োজন, অন্তত আরো কিছুকাল৷ তার হাত ধরেই দেশটা আগাচ্ছে, পিচ্ছিল কাঁদা মাঠিতে হাটা প্রায় শেষ আমাদের, এবার মসৃণ মহাসড়কে উঠার পালা, হাটার পালা, দৌড়ানোর পালা- সেই সুন্দর মহাসড়কে বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, দাঁড়ানোটাই সবচেয়ে কষ্টের, দাঁড়ালে দৌড়ানো ব্যাপার না৷ এগিয়ে যাক বাংলাদেশ, শতায়ু হউন একজন শেখ হাসিনা।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

লেখকঃ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২১ আগস্ট, ২০২১ ইং

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031