সর্বশেষ

» শাপলায় ভরে গেছে কানাইঘাটের ‘আন্দু গাঙ্গ’ ছুটে যাচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুরা

প্রকাশিত: ০১. ডিসেম্বর. ২০২০ | মঙ্গলবার

বদরুল আলম, কানাইঘাট থেকে: নানা আকৃতি ও রঙ্গের শাপলায় কানাইঘাটের ‘আন্দু গাঙ্গ’ ভরে গেছে। প্রতিদিন লেক জুড়ে নতুন নতুন শাপলা ফুটছে। ফুটন্ত শাপলা আর গ্রামীণ সবুজ দৃশ্যে নতুন রুপে যেন নিজেকে সাজিয়েছে। আর এ দৃশ্য দেখতে ছুটে যাচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুরা।

কানাইঘাটের লোভাছড়া, শাহ মীরাপিং (র.) মাজার ও রাণী টিলার মতো এটিও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান
স্থানীয় ভাবে এটিকে আন্দু গাঙ্গ বা পুরাতন সুরমা বলে অভিহিত করা হয়। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপি ও ৩নং দিঘীরপার ইউপি এবং ৪নং সাতঁবাক ইউপি মিলে এই লেকটির অবস্থান। আবার তিন ইউনিয়নের মিলন কেন্দ্র বলা যায়।

লেকটি ১৯৪৭ সালের পূর্বে এটি সুরমা নদীর অংশ ছিলো। প্রায় ৬ কিলোমিটার লেকটি যেখানে শুরু হয়েছিল তার এক কিলোমিটার বিপরীতে গিয়ে শেষ হয়েছে। বৃটিশ সরকার এই এলাকাকে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং নদীর গতিপথ সোজা করার জন্য লেকটির দু’পাশে মাটি ভরাট করে সুরমা নদী থেকে এ অংশ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এরপর এ অংশের নাম হয় পুরাতন সুরমা বা আন্দু গাঙ্গ।

উপজেলার এ অন্যতম দর্শনীয় স্থানটিতে যেমন উপভোগ করা যায় প্রাকৃতির মোহনীয় দৃশ্য। আর অন্যদিকে লেকের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সচ্ছ পানির সমারোহ। এ লেকে মানুষের উপস্থিতি অনেক কম বলে এখানে নানা প্রজাতির পাখির নির্বিঘ্নে বিচরণ চোখে পড়ার মত।

লেকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলো হল লেকের পানি সব মৌসুমে সচ্ছ থাকে। লেকের দ্বারে গড়ে উঠেছে দ্বীপের মতো ছোট ছোট দুটি চর। সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের জুলাই নামক স্থান থেকে লেক পর্যন্ত একটা সচ্ছ পানির খাল রয়েছে। লেকের চার পাশে ছোট ছোট গ্রাম আছে। শীত মৌসুমে অনেক প্রকার দেশীয় অতিথি পাখির দেখা মেলে এই লেকে। জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরের চেয়ে শতগুণ সুন্দর শাপলা ফুটে এই লেকে। তখন ছোট ছোট নৌকায় করে উপভোগ করা যায় লেকে ফুটে উঠা শাপলার সমারোহ। লেকে প্রায় শত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। স্থানীয়দের অনেক পছন্দের খাবার ভেট, সিংগাইর এই লেকে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়।

লেকের পাশ ঘেষে ৪টি জামে মসজিদ, একটি হাট বাজার ও জুলাই আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাকৃতির এই লীলায় কানাইঘাট তথা সিলেটের কর্মব্যস্ত মানুষেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদনের জন্য ছুটে আসতে পারেন কানাইঘাটের এই আন্দু লেকে। লেকের ও লেকের পাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করবে। লেকের এই বিশালতায় পর্যটকরা পাবেন অন্যরকম অনুভূতি। সংরক্ষিত এই লেকটি টুরিজম হিসেবে গড়ে তুলতে দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্যোগে লেকের পাশে কয়েকটি গোলঘরসহ ৬০ ফুট মিটার উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা সময়ের দাবি।

সিলেট থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে সিলেট জকিগঞ্জ রোডের বাংলা বাজার নামক স্থানে নেমে জনপ্রতি ১০টাকা ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশা করে ভবানিগঞ্জ বাজার যেতে হবে, ভবানিগঞ্জ বাজারের পাশেই অন্দু লেক। অথবা সিলেট জকিগঞ্জ রোডে সড়কের বাজার নেমে ১০টাকা ভাড়ায় লেগুনা বা সিএনজি অটোরিকশা ধরে লন্তির মাটি স্ট্যান্ডে যেতে হবে, স্ট্যান্ডের পাশেই আন্দু লেক। যোগাযোগ ব্যাবস্থা তুলনামূলক এখানে অনেক ভালো।

সাবেক ইউপি সদস্য তোতা মিয়া বলেন, অপরূপ সৌন্দের্য্য ভরপুর আন্দু নদীর শাপলার বিল পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। শাপলা বিলকে আরও আকর্ষণীয় পর্যটন বান্ধব করতে পারলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারের আয়ের উৎসও হতে পারে।

দর্শনার্থী সেলিম আহমদ রনি বলেন, ‘আন্দু নদীর’ শাপলার বিল ঘিরে বড় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে এখানে অবকাঠামোগত কিছু সুবিধা এবং সড়কপথের সংস্কার হলে দর্শনার্থী অনেক বাড়বে। পাল্টে যেতে পারে এ অঞ্চলের জনপদের জীবন যাত্রার মান।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930